নিজস্ব প্রতিবেদনঃ আজ ৩ অক্টোবর (বৃহঃবার) ফেরদৌস হাসান রানা এই গুণী কিংবদন্তির জন্মদিন। তাঁর রচিত- পরিচালিত নাটক এখনো তার উপস্থিতি দর্শককে মুগ্ধ করে। তার লেখা উপন্যাস এখনো বইমেলার পাঠকের প্রদান খোরাক। সারা বছর তার পাঠকরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকে তার লেখা নতুন উপন্যাসের জন্য।
আজ থেকে প্রায় ৬৬ বছর আগে অক্টোবরের ৩ তারিখে পদ্মাপাড়ে রাজশাহী শহরে তার জন্ম।
আর পুলিশ অফিসার বাবার কর্মস্থলের সুবাদে বেড়ে ওঠা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে– শহরে বন্দরে– ভিন্নভিন্ন সামাজিক পরিমণ্ডলে,নানান পেশা ও শ্রেণির মানুষজন দেখতে দেখতে, জীবনের পরতে পরতে সঞ্চিত ও লুকায়িত বিচিত্র সব রঙ-রূপ ও রহস্যের প্রকৃতি সন্ধানে চতুর ও সাহসী গোয়েন্দার মতো ঘুরেছেন এখানে ওখানে। শিক্ষাজীবনে স্বাভাবিক জ্ঞানের পাশাপাশি অর্জন করেছেন হরেকরকম অভিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। আর একটা উল্লেখযোগ্য সময় পেশার জগতে যাপন করেছেন এক তুখোড় দুর্দান্ত ও ক্ষীপ্র গতিসম্পন্ন করিতকর্মা মধ্যম সারির সামরিক কর্মকর্তার সদাজাগ্রত নিরলস শৃঙ্খলিত অস্থির জীবন। এই যদি হয় একজন সৃজনশীল মানুষের প্রাথমিক ভিত্তিপরিচয় তাহলে লোকটা ব্যক্তি হিসেবে কেমন আকর্ষণীয় হতে পারে তা শুধু একবার কল্পনা করুন প্রিয় পাঠক! একইসঙ্গে স্মার্ট বিনয়ী মার্জিত কখনো সরলে গরলে কখনো বা সহজসরল একরোখা বেপরোয়া প্রাণোচ্ছল, কখনো দুরন্ত পদ্মার মতো ঢেউ জাগানো উড়ন্ত প্রেমিকপ্রবর — লোকটা কে, কী করে? দেখতে কেমন? যে কিনা ভাষা দিয়ে বহুরূপী চরিত্র নির্মাণ করে, কথা দিয়ে কথা ধরে, গল্পেগল্পে জীবনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখে, উল্টোদিকে টানতে টানতে ভেঙে ফেলে মরচেধরা সমাজ-সংসারের খিলআটা জানালার কাচ।
সে লোকটা আসলে কী? সে এক অসাধারণ চমৎকার, যে কিনা নিজের মধ্যে একসঙ্গে বহু চরিত্র নির্মাণের আশ্চর্য ক্ষমতা রাখে। অন্তরে অন্তর মিলে গেলে কিংবা তার একান্ত সান্নিধ্য পেলে তাকে ছেড়ে যাওয়া মুশকিল। যে একবার তার স্পর্শ লাভ করবে চুম্বকের মতো তাকে ধরে রাখে গভীর মমতায় শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়। এ যেমন আমার বেলায় ঘটেছে। পরিচয়ের পর থেকে পরস্পর ভাইয়ের মতো,বন্ধুর মতো,শুভার্থীর মতো আমরা জড়িয়ে গেছি। তার মানে এ নয় যে আমরা সর্বক্ষণ একসঙ্গে থাকি। কালেভদ্রে তার সাথে হঠাৎ দেখা হয় নাটকীয়ভাবে। মাঝেমধ্যে টুকটাক হাই হ্যালো,খোশগল্প কিংবা তার আস্তানায় ডু মারা, একটানা কয়েক ঘন্টা চুটিয়ে আড্ডাবাজি করতে করতে তারপর বহুদিন কথা নেই খোঁজ নেই — দু’ জনের হাওয়া হয়ে থাকা। এখানেই বোধ হয় তার স্বভাবের সঙ্গে আমার স্বভাবের একটা ক্ষীণ যোগ রয়েছে। ব্যস! আর কী দরকার! — তার জগতে ঢোকার জন্য এ টুকুই যথেষ্ট।
ধীরে ধীরে ব্যক্তি ফেরদৌস হাসানের সামান্য অনুরাগী থেকে অবচেতনে ঔপন্যাসিক, গীতিকার ,টিভি নাট্যকার, নাট্যজন, নির্মাতা,পরিচালক ইত্যাদি বহু গুণে পরিচিত ফেরদৌস হাসানের ভক্ত হয়ে যায় সবাই।
ফেরদৌস হাসাানের উপন্যাসের গুণমুগ্ধ, অতুলনীয় তার গল্প বলার ঢং,কথা আর গল্প দিয়ে তার উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে চলে সামনের দিকে। শেষ না করে উপায় থাকে না। ভাষার কোনো কচকচানি নেই: আছে শুধু কথার পর কথা, সংলাপ ও ঘটনা। স্মার্টলি এগুতে থাকে কাহিনী, পাঠকের ক্ষুধার আগুন প্রশান্তির বারিবর্ষণে আস্তে আস্তে নিভে যায়। পরবর্তী আগুন জ্বালাতে আবার সক্রিয় হযে ওঠে রানার কলম। তার জন্মদিনে কামনা করি ফেরদৌস হাসানের দুর্মর কলম অবিরাম চলতে থাকুক নতুন নতুন নানা ধরনের চরিত্র নির্মাণে,কাহিনী বিন্যাসে, ছোটো ছোটো বাক্য দিয়ে তৈরি করা জাদুকরী ভাষার নিটোল বয়ানে। রানা ভাই! লিখে যাও নতুন নতুন উপন্যাস, তৈরি করো নাটকের পর নাটক– আরো হাজার টিভি নাটক, লিখে যাও ‘অলৌকিক বাতাসের গান’– এর মতো আরও অনেক অনন্য উপন্যাস। জয়তু ফেরদৌস হাসান,অমরতা তোমাকে নিয়ে চিরকাল অমর থাকুক।