নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন, একবার লাগালে ফলন দেবে টানা পাঁচবার

123

বিশিষ্ট জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী একটি নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন করেছেন, যেটি একবার রোপণে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে। এই পাঁচ প্রকার ধান হলো বোরো একবার, আউশ দুবার ও আমন দুবার। অর্থাৎ তিন মৌসুমে বা বছরজুড়েই ধান দেবে এই গাছ। তিনি উদ্ভাবিত এই ধানগাছের নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চব্রীহি’।

 

জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত আমন ধানের আগাম ফলন সংগ্রহ

নিউজ২১ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে ধান নিয়ে কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি জিনবিজ্ঞানী ও ধান গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী। গবেষণার ফল হিসেবে বোরো জাতের নতুন ধানগাছ উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

প্রথমবারের মতো ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত ‘পঞ্চব্রীহি’র একটি ধানগাছ একবার রোপণ করে তা থেকে বছরে পাঁচবার ফলন পাওয়া গেছে।

এ ধান চাষে খরচ কম হয়, কারণ জমি একবার চাষ করতে হয়। বীজতলাও একবার তৈরি করতে হয়। বোরো মৌসুমে জমি প্রস্তুতির সময় সার জমিতে দিতে হয়। পরে প্রয়োজনমতে প্রতি ফলনের আগে-পরে সার দিতে হয় বলেও জানান এ বিজ্ঞানী।

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, ধান গবেষক ও লেখক। আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বসবাস করছেন।  ড আবেদ চৌধুরী উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে।

১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তাঁর এই আবিষ্কার এপোমিক্সিসের সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থায় বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এযাবৎ তাঁর সফল গবেষণা পঞ্চব্রীহি ধান। সম্প্রতি এই অভাবনীয় সাফল্য ঘটে গেছে বাংলাদেশে। জিনবিজ্ঞানী ড আবেদ চৌধুরী একটি নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন করেছেন, যেটি একবার রোপণে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে। তার উদ্ভাবিত এই ধানগাছের নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চব্রীহি’। পঞ্চ মানে ‘পাঁচ’ আর ব্রীহি মানে ‘ধান’।

অদ্য বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড.আব্দুস শহীদ এমপি’র নেতৃত্বে আমস্টার্ডামে অনুষ্টিত “রাউন্ড টেবিল অন বাংলাদেশ এগ্রিকালচার টোয়ার্ড এ প্রসপোরাস ফিউচার, সেমিনার টিমে ডেলিগেট হিসাবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। টিমের প্রধান মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের আমন্ত্রনে আমারও সুযোগ হয় সেখানে উপস্থিত হওয়ার। ড আবেদ স্যারের সাথে আমার কখনো মুখোমুখী পরিচয় হয়নি। তবে, স্যারের উদ্ভাবনী সাফল্য আমাকে আকৃষ্ট করেছে তার সম্পর্কের জানার। আমস্টার্ডামে হোটেল লবিতে স্যারের সাথে দেখা। প্রতিবেশী জীন বিজ্ঞানীর সাথে দেখা অনুভূতি ছিল টান টান। চা কপি পান করে করে আলাপ আলোচনা কুশল বিনিময়। কথা প্রসঙ্গে আমার পরিবারের ছোট সদস্য ছোট ভাই ডা শিপু যিনি বিশ্ব বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সাইন্টিস্ট হিসাবে কর্মরত তার প্রসঙ্গ আসে। এমন খবর শুনার পর আবেদ স্যার বলেন অক্সফোর্ডে ভিজিটে ডা শিপুর সাথে দেখা হবে।

ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন। বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতি ও সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।

১৬৮৭ সালে স্যার আইজাক নিউটন মহাবিশ্বের যে কোন ‌দুটি বস্তুর মধ্যকার আকর্ষণ বলকে একটি সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে সমর্থিত হয়েছেন। সূত্রটি হলো “এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।

বিজ্ঞানীদের প্রকৃতি একই। আমাদের জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ধান গাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে গবেষণা করেন। তিনি চেয়েছিলেন আম-কাঁঠালের গাছ যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, ঠিক তেমনই ধানগাছগুলো দীর্ঘআয়ু পাক। দিনরাত কাজ করে যান ২০ প্রকারের ভিন্ন জাতের ধানগাছ নিয়ে। প্রথমে নতুন ধানের শিষ হয়, এমন ভিন্ন জাতের ১২টি ধানবীজ সংগ্রহ করেন। গেল কয়েক বছর ধরে এই ১২ ধরনের ধানের জাতগুলো চাষ করে তিনি নিজে পর্যবেক্ষণ করেন। যেখানে দেখা যায় নিয়মিতভাবে দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে এই ধানগুলো। অতঃপর তিনি একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা শুরু করেন এবং তাতেও সফল হন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া অন্যগুলো চতুর্থবার ফলনের পর ধ্বংস হয়ে যায়। এই ৪ জাতের ধানের ওপর আবারও ১০ বছর ধরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী।

গুগল সার্চে  বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরীর বিভিন্ন গবেষণা উদ্ভাবনী পাওয়া যায়। সিলেটের এই কৃতি সন্তান দেশের টানে কৃষি বিপ্লব ঘটানোর প্রত্যয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁর নিজ গ্রাম কানিহাটিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন কৃষি খামার। ইউটিউবে বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের ব্যানারে তাঁর innovative ভিডিও লেকচার আছে। ২০১৯ সালে তিনি সোনালি ধান নামে আরেকটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছিলেন; যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ও ওজন কমাতে সহায়তা করে। এই ধান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন হতে স্বীকৃতি পায়। উলেখ্য যে, সম্প্রীতি তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে The Centre for Advanced Research in Sciences (CARS)  এ  honorary জীন বিজ্ঞানী হিসাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

কৃষির আধুনিকায়নে পঞ্চব্রীহি ধান দেশের কৃষকদের জন্য একটি আশার বিষয়। তাঁর এই গবেষণাটি অতুলনীয় যা সামাজিক মাধ্যমে আমার দৃষ্টকটু হয়েছে। প্রবাসে থাকলেও দেশের ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছেন তিনি। নিজের উদ্ভাবিত জাতের ধান উৎপাদনে জন্মস্থান কানিহাটি গ্রামের পারিবারিক জমিতে গড়ে তুলেছেন খামার। প্রথমবারের মতো একই গাছে এক বছরে পাঁচবার ফলন এসেছে।

 

news image

আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আমস্টারড্রামে কথা বলেছেন জীন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর সাথে তাঁর সফল উদ্ভাবনি গবেষণা “পঞ্চব্রীহি, ধান নিয়ে। কৃষকদের পক্ষে ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে জীন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরীর খোলামেলা আলোচনা আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো।

প্রশ্নঃ

আপনি কেমন আছেন স্যার ?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

প্রিয় নজরুল ইসলাম, আমি বেশ ভাল আছি। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ it was my pleasure to meet with you in Amsterdam. you’re my neighbours

 

প্রশ্নঃ

স্যার আপনি আমস্টার্ডাম কেন এসেছেন একটু জানতে পারি ?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড.আব্দুস শহীদ এমপির নেতৃত্বে আমস্টার্ডামে বাংলাদেশের প্রতিনিধি টিম অংশগ্রন করে। প্রতিনিধি টিমে ডেলিগেট হিসাবে আমি অংশগ্রহণ করি। একটি ইউনিভার্সিতে “রাউন্ড টেবিল অন বাংলাদেশ এগ্রিকালচার টোয়ার্ড এ প্রসপোরাস ফিউচার, সেমিনারে আমি বাংলাদেশের কৃষি ও আমাদের সাফল্য নিয়ে কথা বলেছি। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের আমন্ত্রণে আপনিও এসেছেন। আপনাকে পেয়ে আমি বিষম খুশি।

প্রশ্নঃ

একজন জীন বিজ্ঞানী হিসাবে দেশের কৃষকদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

কৃষকদের সাথে আমার সম্পর্ক আত্মার। আমি দেখেছি আমারদের কৃষক ধান চাষ করেন তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন না। তাদের খরচ অনেক বেশি, খরচ করার যা ধান পান, ওটা বিক্রি করে তাঁদের পোষায় না। যারা ধানের উপর নির্ভরশীল,তারা দরিদ্র থেকেই যান। ধান বিক্রির টাকা, উৎপাদন খরচ দিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না। এটাই বাস্তবতা। এটা আমার জন্য খুব পীড়া দায়ক ছিল।

প্রশ্নঃ

আমাদের দেশের লোকজন কৃষিনির্ভর,কৃষির আধুনিকায়ন মানে তাদের জীবন মান উন্নয়ন, আপনি কি ভাবছেন?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

আমি দেখছি দেশে কৃষি নির্ভর পরিবার খুব অবহেলিত। মানুষ শুধু চায় কমদামে ধান পেতে। কিন্তু কৃষকরা যে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, সেটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবছি কৃষিতে কিভাবে আয় বাড়ানো যায়, ব্যয় কমানো যায়, এটা নিয়ে আমি সারাক্ষণ চিন্তা করি। একটা ধান জমিতে থাকবে, বিশাল আকার ধারণ করে অনেক অনেক ধান দেবে। আমি এই জিনিসটাই করতে চেয়েছি। নজরুল ইসলাম অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমি ইতিমধ্যে ইটা করতে পেরেছি।

প্রশ্নঃ

পঞ্চব্রীহি ধানের চাষাবাদের জন্য কৃষকদের মাঝে কিভাবে জাগরণ তৈরী করা যায় ?

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী:

কৃষি এমন একটি শিল্প যা কঠোর পরিশ্রম, স্থিতিস্থাপকতা, শক্তি এবং সহায়ক সম্প্রদায়ের জন্য পরিচিত। যাইহোক, খামার পরিবারগুলি প্রায়শই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় যেমন কম পণ্যের দাম, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া, অসময়ে সরঞ্জামের ভাঙ্গন, এবং দৈনন্দিন এবং মৌসুমী কাজগুলি সম্পূর্ণ করার সুযোগের একটি সংকীর্ণ উইন্ডো যা প্রায়ই খামার পরিবারের জীবনে চাপ সৃষ্টি করে। কৃষকদের আমার উদ্ভাবনি নতুন জাতের বীজ সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি নতুন উদ্ভাবনকারী এই ধান ব্যবসায়িকভাবে ফলনে কৃষকরা অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হবেন।

প্রশ্নঃ

এযাবৎ আপনার সফল গবেষণা পঞ্চব্রীহি ধান। একটু ব্যাপক জানতে চাই।

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন করেছি ,যেটি একবার রোপণে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে। এই পাঁচ প্রকার ধান হলো বোরো একবার, আউশ দুবার ও আমন দুবার। অর্থাৎ তিন মৌসুমে বা বছরজুড়েই ধান দেবে এই গাছ। তিনি উদ্ভাবিত এই ধানগাছের নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চব্রীহি’। পঞ্চ মানে ‘পাঁচ’ আর ব্রীহি মানে ‘ধান’। বোরো হিসেবে বছরের প্রথমে লাগানো এ ধান ১১০ দিন পর পাকঁবে। ওই একই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫ দিন পরপর একবার বোরো, দুইবার আউশ এবং দুইবার আমন ধান দিবে । কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন বেশি, খরচও কম। তবে, প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। আপাতত এর নাম পঞ্চব্রীহি রেখেছি। পরবর্তী সময়ে চিন্তা ভাবনা করে নাম নির্ধারণ করবো। ‘ষষ্ঠবার ফলনে সফল হলে এই জাতের নামকরণ ‘ষষ্ঠব্রীহি’ করা যেতে পারে। আবার ‘বর্ষব্রীহি’ বলা যায়, যেহেতু বছরজুড়ে ফলন হয়। ‘চিরব্রীহি’,‘অমরব্রীহি’ নামও রাখা যেতে পারে, যেহেতু গাছটি মরছে না। আবার আমার গ্রাম কানিহাটির নামেও রাখতে পারি।

প্রশ্নঃ

আপনার গবেষণালব্ধ এ ধান কি পরিবেশবান্ধব  ?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

এ ধরনের ধানগাছকে পরিবেশের জন্য আশীর্বাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক জমি একাধিকবার চাষ দিলে মিথেন গ্যাস ও কার্বনড্রাইঅক্সাইড প্রচুর নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু এ ধান একবার চাষে উৎপাদন খরচ অনেকটা কম হবে। চাষাবাদ অন্য ধানের মতোই সহজ। এজন্য একে পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু পরিবর্তন বান্ধব বলে থাকি আমি। আমার উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধানের নাম আমার গ্রামের নামে কানিহটি ১ থেকে ১৬ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

 

প্রশ্নঃ আপনার গ্রামের কৃষি খামার কে দেখাশুনা করেন?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

স্থানীয় ভাবে কৃষকরা আমার খামার দেখা শুনা করছেন। তাঁরা প্রতিবেশী কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। তাদের সাফল্যের গল্প শুনে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছেন।

প্রশ্নঃ

পঞ্চব্রহী ধান চাষ করেছেন ,ফসল ঘরে তুলেছেন এমন দুই একজন কৃষকের কথা শুনতে চাই। রেফারেন্স হিসাবে তাদের কথা কি আমাদের একটু শুনাবেন?

জিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী:

আমার খামার দেখভাল করেন রাসেল মিয়া নামের একজন। তাঁর সাফল্যের কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে পারি। রাসেল, পরীক্ষামূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে ধান রোপণ করে সফলভাবে পাঁচবার গাছ থেকে ধান কেটেছেন । প্রথমবার উৎপাদনে যে খরচ হয়, পরের বার উৎপাদনে তেমন খরচ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।  তিনি বলেছেন কৃষকরা খুব কম খরচে এই ধান উৎপাদন করতে পারবেন। আরেক কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের এলাকায় জন্ম নেওয়া আবেদ চৌধুরী একটি ধান আবিষ্কার করেছেন। ধানটা খুবই ভালো। একবার রোপণ করলে পাঁচবার কেটে নেওয়া যায়। আমিও এই ধান এনেছি। এই ধানটার জন্য আমি গর্বিত। আমরা সবাই আগ্রহী যাতে এই ধান আরও বেশি বেশি উৎপন্ন হয়।

ড.আবেদ চৌধুরী আমস্টার্ডামে আপনার ব্যাস্ত সময়ে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার ধানবিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত কারণে বিদেশের মাটিতে গবেষণা করলেও দেশে তার গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তুলেছেন খামার। তার নামে আবেদ ধানও এলাকায় চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছেন কৃষকরা।

আপনার গবেষণা এগিয়ে যাক সেই প্রত্যাশা।   বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়নে আপনার গবেষণা মাইলস্টোন হিসাবে কাজ করবে এটা আমার বিশ্বাস।

 

পূর্বের খবরনেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে জার্মানি!
পরবর্তি খবরজলবায়ু পরিবর্তনই এয়ার টার্বুলেন্সের জন্য দায়ী