দেশের ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে যে ৮টি ব্যাংকের অবস্থা ভালো, ইয়েলো জোনে ২৯টি আর ৯টি রেড জোনে আছে

198

দেশের ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটিসহ ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ২৯টি ব্যাংক ইয়েলো জোনে আর ৮টি ব্যাংক গ্রিন জোনে অর্থাৎ ভালো অবস্থায় রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ভঙ্গুর আর্থিক দশা সামনে এসেছে। আর  ইয়েলো জোনে রয়েছে ২৯টি। অর্থাৎ সেগুলোর পারফরম্যান্স মাঝারি পর্যায়ের। সবমিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংক দুর্বল হয়েছে।

প্রভিশনে ঘাটতি ১২ ব্যাংকেপ্রভিশনে ঘাটতি ১২ ব্যাংকে

আমানতকারীদের জমা রাখা টাকা থেকে গ্রাহকদের ঋণ দেয় ব্যাংক। বিতরণ করা সেই ঋণ কোনও কারণে খেলাপি হলে সেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে হয়। এটি আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ঋণ জালিয়াতির কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এখন নাজুক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ১২ ব্যাংক।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক/ফাইল ছবি/ঢাকা ট্রিবিউন

ঢাকাঃ বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে দেশের মাত্র আটটি ব্যাংক ভালো অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়, আটটি দেশি ও আটটি বিদেশি অর্থাৎ মোট ১৬টি ব্যাংক ভালো অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া গ্রিন জোনে রয়েছে ১৬টি ব্যাংক।সেগুলোর অবস্থা ভালো। এর মানে এগুলোর কার্য সম্পাদন সন্তোষজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, মোট ৫৪টি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে এই ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

তারা হলো- প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে আটটিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র আটটি।

৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার নয়টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে রয়েছে দুটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক। ১৯টি প্রচলিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আটটি শরিয়া-ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক।

১৯টি প্রচলিত ব্যাংক হলো- আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড বাণিজ্যিক ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক।

আটটি শরিয়া-ভিত্তিক ব্যাংক হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েলো জোন ব্যাংকগুলো শিল্প গড় তুলনায় তাদের স্বাস্থ্যের আপেক্ষিক অবনতির কারণে তদারকির মনোযোগ প্রয়োজন।

এতে আরও বলা হয়, রেড জোনে পড়া ব্যাংকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের অধীনে সব ব্যাংককে সংকলন করেছে। এর মধ্যে ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তা হলো- মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণমান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা।

এতে ১ রেটিং সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়, আর ৫ রেটিং সবচেয়ে খারাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাল ও হলুদ জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ব্যাংকিং পর্যালোচনায় ৩৮ ব্যাংকের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। আর ১৬টির অবস্থা উন্নতি হয়েছে। তবে ভিন্নতা থাকায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক বিশ্লেষণ থেকে বাদ পড়েছে।

অন্যদিকে, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

 

৮ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৮ কোটি টাকা | undefined

যে সকল ব্যাংক যে জোনে আছে

রেড জোনে রয়েছে মোট ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ৪টিই হলো রাষ্ট্রায়ত্ত। সেগুলো হলো-বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। এ জোনে রয়েছে সমান সংখ্যক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এগুলো হলো-পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। আর মাত্র ১টি বিদেশি ব্যাংক রেড জোনে পড়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

মোট ২৯টি ব্যাংক ইয়োলো জোনে আছে। এর মধ্যে ৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থান রেড জোনের কাছাকাছি। সেগুলো হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে রয়েছে ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১৯টি প্রচলিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮টি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। সেগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

Advertisement

গ্রিন জোনে পড়েছে ১৬টি ব্যাংক। সেগুলো হলো- প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি। অর্থাৎ গ্রিন জোনে রয়েছে মাত্র ৮টি দেশি ব্যাংক।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত ৫৪টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এসময়ে ব্যাংকগুলোর বিগত ছয়টি অর্ধবার্ষিক উপাত্ত আমলে নেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগ।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই ম্যাপ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর ডেটা পয়েন্ট নমুনা ব্যাংকের অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এছাড়া বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে এই ম্যাপের বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, এগুলোর ঐতিহাসিক তথ্য নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রেড জোনে থাকা ১২টি ব্যাংকের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকা। মোট খেলাপি ঋণের যা ৬২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প গড়ের তুলনায় ইয়োলো জোনের ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য তুলনামূলক খারাপ। ফলে সেসব ব্যাংকে তদারকি প্রয়োজন। আর রেড জোনে পড়া ব্যাংকগুলোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার।

পূর্বের খবরজনপ্রিয় সংগীত শিল্পী খালিদ আর নেই
পরবর্তি খবরইফতার পার্টি নয়, খাবার বিলিয়ে দিতে দিনঃ প্রধানমন্ত্রী