হিন্দু কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি নিয়ে বির্তক, দুঃখ প্রকাশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের

13

ঢাকাঃ সারাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশের চিঠি নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুঃখ প্রকাশ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

ঢাকায় কর্মরত হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি নির্দেশ দিয়ে এক চিঠি জারি করে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বধীন অন্তরবর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

হিন্দু কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি উদ্দেশ্য সম্পর্কে এই চিঠিতে স্পষ্টভাবে কিছু বলা না থাকায় এই নিয়ে দেশে-বিদেশে বির্তক সৃষ্টি হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমেও এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করে। আগের এই চিঠির ৮ দিন পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করলো বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

গত ২৯ অগাস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জারি করা হয়। ওই চিঠির কপি মন্ত্রণালয়ের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, “গত ২৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগ থেকে (স্মারক নাম্বার উল্লেখ করে) উপর্যুক্ত বিষয় ও স্মারকের মর্মানুযায়ী ঢাকায় কর্মরত হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুগ্মসচিব ও সমমর্যদা সম্পন্ন এবং তদুর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নামের তালিকার সফটকপি ও হার্ডকপি বাংলায় একটি ই-মেইল এ্যাড্রেসে আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসন-১ শাখায় প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা ও তাদের জোর করে চাকরি থেকে পদত্যাগ করানোর অভিযোগ ওঠে।

এরমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চাওয়ার চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সমালোচনার মুখে শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর হিন্দু কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়ার ব্যাখাসহ মন্ত্রণালয় সংশোধনী দিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়।

 

চিঠি

 

২৯ আগস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি নিয়ে জারি হওয়া চিঠিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এটা অনেক পুরনো জিনিস। এই নিয়ে অনেক কান্ড-কারখানা হয়ে গেছে।”

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, “আসলে বিজয়া দশমীর দাওয়াত দেওয়ার জন্য এই তালিকা রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকেই চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিঠিতে সেই রেফারেন্স না থাকায় ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে।”

“যে কর্মকর্তা এই চিঠি ইস্যু করেছিল তার জ্ঞানে ধরে নাই যে, এটা নিয়ে যে অন্য রকম কিছু হতে পারে”-বলে যোগ করেন এই উপদেষ্টা।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “সে মনে করেছে রাষ্ট্রপতির বরাত দিয়ে চিঠি দিয়েছি, কিছুই হবে না। এই রকম কিছু কর্মকর্তা সব মন্ত্রণালয়ে আছে। আসলে এসব কর্মকর্তারা অতীতে কোনো কাজকর্ম করে নাই তো। যার কারণে এটা নিয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। দিল্লি থেকে আমাকে ফোন করেছিল।”

যে কর্মকর্তা এই চিঠি দিয়েছে, সে এখন হাসপাতালে আছে বলে জানান এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি।”

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এগুলো রুটিন কাজ। পলিসি লেটার না।…মন্ত্রণালয়ের পলিসি লেটার হলে আমার কাছে আসতো।”

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ স্বাক্ষরিত ৭ অগাস্টের সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- “আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিতব্য শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে গত ২৭ আগস্ট পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকায় কর্মরত হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুগ্ম-সচিব/ সমমর্যাদা সম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থায় এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়।”

সংশোধিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “উক্ত পত্রে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সূত্র উল্লেখপূর্বক রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের পত্রের সংযুক্তি হিসেবে প্রেরণ করা হলেও পত্রের বিবরণে শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিতব্য ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে পত্রটির বিষয়ে বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দপ্তর/সংস্থায় প্রেরিত পত্রে শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিতব্য শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণে সৃষ্ট বিভ্রান্তির জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যেই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।”

পূর্বের খবরভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে কেন বাংলাদেশের ওপর নজর রাখতে বলছেন মন্ত্রী রাজনাথ সিং?
পরবর্তি খবরডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি বাতিল হচ্ছে?