রোববার ভোরে গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি বাসের চলাচলের উদ্বোধন করবেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিআরটিসির এসি বাসগুলো শিববাড়ী টার্মিনাল থেকে বিআরটি লেনে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথে চলাচল করবে। শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়াও ৭০ টাকা। আর শিববাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১৪০ টাকা।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীর চাহিদা বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়বে। বিআরটি লেন দিয়ে কম সময়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তানের ভাড়াও ৭০ টাকা। বিআরটি লেন দিয়ে এখন কার ও মাইক্রোবাসও চলতে পারবে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে চার জোড়া কমিউটার ট্রেনও চালু হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিআরটি লেন দিয়ে শুধু বাসই চলাচল করার কথা। কিন্তু শুরুতে বিআরটিসির ১০টি বাস দিয়ে পুরো বিআরটি লেন আটকে রাখা ঠিক হবে না। এ জন্য কার ও মাইক্রোবাসও বিআরটি লেন দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে। এর ফলে সাধারণ লেনগুলোতে চাপ কমে যাবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোববার গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে চার জোড়া কমিউটার ট্রেনও চালু করবেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি সড়কের পাশাপাশি রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও আছেন। চার জোড়া কমিউটার ট্রেন জয়দেবপুর থেকে ঢাকার কমলাপুরের মধ্যে চলাচল করবে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে নরসিংদী থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পথে আরও কিছু কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে রেলের।
সংস্থার নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সড়কের ওপর চাপ কমাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে।
এক যুগের বেশি বিআরটি প্রকল্প
বিআরটি প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১১ সালে। চার বছরের মধ্যে আধুনিক জোড়া লাগানো বড় বাস চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিআরটি দিয়ে ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। যানজট, সিগন্যাল কিংবা অন্য কোনো বাধায় বাস আটকে থাকবে না। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার এক যুগের বেশি সময় পর তা চালু হতে যাচ্ছে।
শুরুতে বিআরটি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। তিন দফা সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে গার্ডার চাপাসহ দুর্ঘটনায় ছয়জন মারা গেছেন। লাখ লাখ মানুষকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালু হলেও সড়ক বিভাজক, কিছু স্টেশন, পদচারী-সেতু নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার বাস চলাচলের ফাঁকে ফাঁকে বাকি কাজ শেষ করতে চায়।
বিআরটি প্রকল্প নেওয়ার পর তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রকল্প কর্মকর্তারা নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়ে বহুবার ভোগান্তি নিরসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন কয়েক দফায়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেননি।
বিশেষ বাস পরিচালনার জন্য ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল) গঠন করা হয়েছে। তারা বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি পথে বিশেষায়িত বাসসেবা ‘ঢাকা লাইন’ চালুর ঘোষণা দেয়। তবে ১৩৭টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস কেনার দরপত্র আহ্বান করেও তা পারেনি।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি থাকার পরও একটি পথে কিছু বাস চালানোর আলাদা কোম্পানি গঠন করা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, কোম্পানির এমডিসহ ২৪ জন স্থায়ী জনবল লাগবে। এর বাইরে অস্থায়ীভাবেও লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাতে হবে। ফলে কোম্পানিটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় কি না, সেই আলোচনাও আছে।