ভারতীয় দোসর দেশি মিডিয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে

88

নিউজ২১ডেস্কঃ ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদী শাসক স্বৈরাচারিণী মাদার অফ মাফিয়া শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে এখনো সরকার গঠন করা হয়নি। এই মধ্যবর্তী সময়ে শুরু হয়েছে ‘ভারত ষড়যন্ত্র’। হিন্দুত্ববাদী ভারত দীর্ঘদিন থেকে শেখ হাসিনাকে ‘পুতুল সরকার’ হিসেবে ক্ষমতায় রেখেছিলেন। জনরোষে শেখ হাসিনা পালানোয় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত, উস্কানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের কিছু গণমাধ্যম। ভারতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ এবং জ্বালাও পোড়াওকে অতিরঞ্জিত প্রচার করছে। ভারতীয় দোসর দেশি গণমাধ্যম থেকে দেশবাসী সতর্ক থাকুন। শেখ হাসিনা পালানোর পর তার মন্ত্রী-এমপি ও দোসররা কেউ গ্রেফতার হয়েছে, কেউ আত্মগোপন করেছেন।

এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনাকে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে অভিযুক্ত করছেন। কিন্তু কিছু ইংরেজি-বাংলা গণমাধ্যম দেশের বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতাকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ না করে উল্টো পথে হাঁটছে। নরেন্দ্র মোদির চেলা চামুণ্ডা ও ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমগুলো হামলা, অগ্নি সংযোগে জঙ্গি কানেকশন খুঁজছেন এবং মোদিকে খুশি করতে উস্কানিমূলক খবর ফলাও করে প্রচার করছেন। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ১৬ বছরে দেশে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ খুন হয়েছেন। কয়েকশ’ মানুষকে গুম করে কাউকে হত্যা আর কাউকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতারা দর্জি বিশ্বজিৎ দাস ও বুয়েটের আবরার ফাহাদকে কি পৈশাচিক ভাবে হত্যা করেছে সে লোমহর্ষক দৃশ্য ওই গণমাধ্যমগুলো ভুলে গেছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের পৈশাচিকতা, জুলুম নির্যাতন এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের খুন-জখম ক্রিয়াকলাপ এই সব মিডিয়ার সাংবাদিকদের আহত করে না। এই মুখচেনা ইংরেজি-বাংলা গণমাধ্যমগুলো ওইসব লোমহর্ষক পৈশাচিকতা চোখে দেখেনা। গত কয়েকদিনে যে কয়েকশ’ ছাত্রজনতা পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে শহীদ হলো সেটাও এদের কাছে বড় ঘটনা নয়। এদের কাছে বড় ঘটনা হলো নতুন সরকার গঠনের আগে বিক্ষুব্ধ মানুষ ১৫ বছরের ক্ষোভ প্রকাশে জ্বালাও পোড়াও করেছে এটা। বিক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিশোধ নিতে কোলাটারাল ড্যামেজ (অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু, আঘাত, ক্ষতি) হয়েছে (এটা অনাকাক্সিক্ষত এবং সমর্থনযোগ্য নয়) সেগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। এর সঙ্গে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ জুড়ে দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয় ভারত বেশি খায়।

শেখ হাসিনা পালানোর পরই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রথমেই দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর প্রহরা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাম্ক্তু হয়েই ‘প্রতিশোধ নয়, সবাই মিলে দেশ গড়ে তুলতে হবে’ দেশবাসীর উদ্দেশে এই বার্তা দিয়েছেন। তিনি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে সারাদেশে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ঘোষণা দেন। গতকালও বেগম খালেদা জিয়া দলীয় সমাবেশে ভিডিও বার্তায় ‘প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাজ গড়তে হবে’ বক্তব্য দিয়েছেন। তারেক রহমান বলেছেন, ‘সংখালঘুদের নিরাপত্তায় বিএনপি ঢাল হিসেবে কাজ করছে’। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিক্ষুব্ধ দেশবাসীর প্রতি একই আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক প্রহরা বসানোর নির্দেশ দেন।

গণমাধ্যমে সচিত্র খবর প্রচার হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদরাসার শিক্ষার্থী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রহরা দিচ্ছেন। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও প্রতিবেশী হিন্দু ভাইবোনদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখছেন। এ অবস্থায় গণমাধ্যম, বু্িদ্ধজীবী ও সমাজের দায়িত্বশীল সবার উচিত গণঅভ্যুত্থানের সুফল যাতে ছিনতাই না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী এই সময়টুকুতে দেশকে স্থিতিশীল রাখতে সবার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু পলাতক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মুরুব্বী ভারতের কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশের জনতার বিজয়ের চিত্র তুলে ধরার বদলে জ্বালাও পোড়াওয়ে উস্কানিমূলক খবর প্রচার করছে এবং মানুষকে আরো উস্কে দিয়ে ধর্মীয় বিভেদের অপচেষ্টা করছে। তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া যারা পতিত শেখ হাসিনার তাঁবেদারী করেছেন এবং দিল্লির নেকনজরে থাকার চেষ্টা করছেন সেগুলো সংখ্যালঘুদের তথাকথিত নির্যাতনের মনগড়া চিত্র প্রকাশ করছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর মানুষের ওপর যে জুলুম নির্যাতন করেছে, সেখানে মুসিলম ধর্মীয় ও হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করেছে। সংগতভাবে আওয়ামী লীগের ওই নেতাকর্মীদের ওপর মানুষ বিক্ষুব্ধ। বিক্ষুব্ধ মানুষের কাছে ধর্মীয় কোনো বিষয় নেই, যারা আওয়ামী লীগের হয়ে মানুষকে অত্যাচার করেছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিচ্ছে। অথচ সেটাকে ‘ধর্মীয় ট্যাগ’ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

ভারতকে খুশি করতে দেশীয় গণমাধ্যমের কেন এই উস্কানি? বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের দাবি কি অন্যায়? দেশের ভোটাররা দীর্ঘ কত বছর থেকে ভোট দিতে পারছেন না? হিন্দুত্ববাদী ভারত কখনোই বাংলাদেশের এবং সাধারণ মানুষের প্রকৃত বন্ধু ছিল না। গত ৬ আগস্ট বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার পতন ভারত তার একজন বন্ধুকে হারালো। শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের প্রকৃত বন্ধু’। এর অর্থ কি? ভারত সরকার সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রেখে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছেন। ১৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে দেড়শতাধিক চুক্তি করেছেন সবগুলো ভারতের স্বার্থে। এখন সেই হাসিনা উৎখাতের পর মোদি গংদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের মনগড়া অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। কিন্তু দেশের কিছু ইংরেজি বাংলা গণমাধ্যম দিল্লিকে খুশি করতে অযাচিত ভাবে বিপ্লব পরবর্তী হত্যা-ধ্বংস, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ইত্যাদি খবর ফলাও করে প্রচার করে মোদিকে খুশি করার মিশনে নেমে গেছেন।

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে সাধারণ মানুষ ভয়ঙ্কর পৈশাচিক পরিবেশে দিন কাটিয়েছে। গোটা দেশটাকে জেলখানায় পরিণত করা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক দেশ অথচ মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। নির্বাচনের নামে ভারতের নীল নকশায় পাতানো খেলার মাধ্যমে বারবার সরকার গঠন করেছে হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দলের লেবাসে ‘মাফিয়া চক্র’ বানানো হয়েছে। অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগকে খুনী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বাহিনীতে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নির্দেশে যে কত মানুষ খুন হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের আমলা থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনীর ভিতরে সুকৌশলে দিল্লির এজেন্ট ঢুকিয়ে শেখ হাসিনা একদিকে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন; অন্যদিকে বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের উপর পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়েছেন। শেখ হাসিনা অপরাধ জগতে মাফিয়া এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিণ্ডিকেট তৈরি করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এতে করে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই আজিজ আহমেদ, জিয়া আহসান, বেনজির আহমেদ, আসাদুজ্জামান মিয়া, মনিরুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকারের মতো ব্যক্তিদের সেনা ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। তারা একদিকে রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করেছে; অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে নির্দয়ভাবে ঠেঙ্গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের অবৈধ নির্দেশে। বিশ্বজিৎ দাসের খুনের দৃশ্য মনে আছে? ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পুলিশের সামনে কিভাবে রামদা দিয়ে খুন করেছে ছাত্রলীগ নেতারা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবরার ফাহাদ ‘তিস্তার পানি ভারত কেন দেবে না’ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় ছাত্রলীগের নেতারা কি নিষ্ঠুরভাবে তাকে খুন করেছে। পুলিশের আইজিপি’র দম্ভোক্তি ‘অস্ত্র হাতে কি আমরা হাডুডু খেলবো। সোজা বুকের মধ্যে গুলি ছুঁড়বো’। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইসলাম বিদ্বেষী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপির নেতাদের গুলি করে হত্যা করো’। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে কওমী মাদরাসার হাজারো শিক্ষার্থী হত্যার কথা মনে আছে? অপ্রিয় হলেও সত্য যে, শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত যাওয়ার পর দেশের বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু থানায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে।

১৬ বছর যেভাবে মানুষকে জুলুম নির্যাতন, হামলা, মামলা, সম্পত্তি দখল আওয়ামী লীগ নেতারা করেছে, তাকে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতিতে মানুষ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আত্মগোপন করার পর পুলিশের অনেক কনস্টেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘আমরা উপরের নির্দেশে মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছি। আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। চাকরি বাঁচানোর জন্য আমরা এতো মানুষকে হত্যা করেছি। আমরা এখন পুলিশ অফিসার যারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের বিচার চাই।’ প্রশ্ন হচ্ছে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকেও শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে আন্দোলন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তা শোনেননি। কিন্তু পুলিশের সদস্যরা কেন এতোগুলো শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করলো? অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ১৫ বছরে পুলিশের নিষ্ঠুরতা, র‌্যাবের ক্রস ফায়ার, জুলুম-নির্যাতনের কথা কে না জানে? গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর পুলিশের কয়েকজন কনস্টেবলের এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাসছে। প্রধানমন্ত্রীর ওপর মানুষ চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে গণভবনে হাসিনার ব্যবহৃত যা যা পেয়েছে তা নিয়ে জনতা নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। পুলিশী নির্যাতনে ছাত্রআন্দোলনের তিন শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে। পুলিশ প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ মেরেছে। বাধ্য হয়েই বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ধাওয়া দিয়েছে। এতে সব পুলিশ সদস্য কার্যত পলাতক রয়েছেন। দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী আবশ্যক। সেটা হয়তো নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে করবে। কিন্তু পতিত হাসিনার শাসনামলের মতো দলবাজ, খুনি পুলিশ মানুষের প্রত্যাশিত হতে পারে না।

ভারতের ছাতার নিচে থেকে শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জনগণকে নিয়ে যে সব ভাষা ও শব্দের ব্যবহার করেছেন সে সব শব্দ প্রিন্ট মিডিয়ায় ছাপানো সম্ভব নয়। শুধু কি তাই, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী,্ এমপি ও নেতারা শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করছেন। দলের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। ফলে বিক্ষুব্ধ কিছু মানুষ ছাত্র বিপ্লবে সাফল্যের পর শেখ হাসিনা ও তার খুনিদের ওপর নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটা অনাকাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের ‘র’ এর এজেন্টরা থানায় পুলিশ হত্যা, হিন্দুদের বাসা-মন্দিরে হামলা করে তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দিচ্ছে। দেশীয় মুখচেনা ভারতের দোসর কিছু গণমাধ্যম ফলাও করে তা প্রচার করা হচ্ছে।

দিল্লির পাপেট শেখ হাসিনার পালানোর পর ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের জনগণ ও সম্ভাব্য নতুন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এটা স্বাভাবিক। তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশ থেকে যে সুবিধা নিয়েছেন তা অন্য সরকারের সময় পাবেন না। হাসিনা ভারতকে সবকিছু দিয়েছেন। ৫ আগস্ট পালানোর পর মংলা বন্দর থেকে ভারতের সব জাহাজ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলাচল করা ট্রেন বন্ধ রাখতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষ হাসিনা পালানোয় খুশি। কিন্তু দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার, কিছু বুদ্ধিজীবী এবং কিছু গণমাধ্যম বেজায় চটেছেন। তারা হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে অনেক বৈধ-অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন। দিল্লি ও কোলকাতার কিছু সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী লাখ লাখ টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাড়াটে হিসেবে ভারত ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার গুণগান গেয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন। সে কারণে শেখ হাসিনার গণতন্ত্র হত্যা, ১৫ বছর ধরে নির্বাচনের নামে তামাশা, ছাত্রলীগের সিরিয়াল খুন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘুষ-দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচারসহ হাজারো অপকাণ্ড তাদের (ভারতের কিছু সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী) চোখে কোনো অপরাধ মনে হয় না। ফলে তারা শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশকে ভালচোখে দেখবে প্রত্যাশা করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যম!

কিছু গণমাধ্যম এমন ভাবে জ্বালাও পোড়াও এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের চিত্র তুলে ধরছে যেন বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে গেছে। অথচ এই গণমাধ্যমগুলো গত কয়েক দিনে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আহতবোধ করেননি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, সেগুলো ফলাও করে প্রচার করেনি। এখন তারা মায়াকান্না শুরু করেছে জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা দেখে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করবে এমন কোনো প্রচারণা থেকে বিরত রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় মাদরাসার ছাত্ররা হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর প্রহরা দিচ্ছেন। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা দলবদ্ধভাবে মন্দির প্রহরা দিচ্ছেন। পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশ আত্মগোপন করায় রাজধানী ঢাকায় মাদরাসার ছাত্র ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোড়ে মোড়ে ও সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব খবর মুখচেনা ওই গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার হয় না। শুধু দিল্লির দাদাদের খুশি করতে এবং পতিত হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর যন্ত্রণা থেকে এসব অপপ্রচারের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ক্ষেত্র তৈরির অপচেষ্টা করছেন।

কর্তৃত্ববাদী একনায়কের পতন হয়েছে। এখন চলছে নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড়। এই মধ্যবর্তী অবস্থায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে যা কারো কাম্য নয়। এ সময় সকলকে ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং দেশ পুনর্গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভুমিকা রাখতে হবে।

পূর্বের খবরআজ রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ
পরবর্তি খবরশেখ হাসিনার পতন হয় সেনাবাহিনীর যে সিদ্ধান্তে