স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

87

ঢাকাঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের পিতার নাম মনসুর রহমান।

তিনি পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান পিতার সাথে তাঁর কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।

 

শুভ জন্মদিন জিয়াউর রহমান

 

মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ত্ঋর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া জাতির দিশারী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে। সেদিন থেকেই দেশবাসী তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় পায়। অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে আবার পেশাদার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন।

দেশের সব সংকটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তাঁর জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সকল সঙ্কটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছেন।

জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তাঁর গড়া সে রাজনৈতিক দল তার সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। আর বেগম খালেদা জিয়া দেশের জনপ্রিয় নেতৃত্বে পরিণত হয়েছেন। জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা এবং বেগম খালেদা জিয়া নিজস্ব নেতৃত্ব গুণে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

 

 

অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসীকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান দেশের জন্য অসামান্য। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের বিশ্ব মানচিত্রে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছেন তাঁর শাসনামলে।

জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিক-নির্দেশনা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তাঁরই (শেখ মুজিব) সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তাঁর স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। শুধু দেশে নয়, ইরাক-ইরান যুদ্ধসহ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের নানা সঙ্কটে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এমনকি তার রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তাঁর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের সর্বস্তরের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

 

কর্মসূচি

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ  হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১১টায় শেরেবাংলানগরে তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সিনিয়র নেতারা।

দুপুর ২টায়  ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বক্তব্য রাখবেন, বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য,  জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনেরা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এ ছাড়াও বেলা ৩টা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউট আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপির শরীক দলের নেতারা। এতে বক্তব্য দেবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান  ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্নয়ক জোনায়েদ সাকিসহ জাতীয় নেতারা।

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টূর্নামেন্ট’ আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ২৬ থানার অংশ গ্রহণে  প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে শষে সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে মিরপুর শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পুরস্কার বিতরণ করবেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, পরিচালনা করবেন বিএনপি ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহবায়ক আমিনুল হক।

এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দলের অঙ্গ-সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। সারা দেশে একই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ।

এদিকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবাষির্কী উপলক্ষে বানী দিয়েছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বানীতে তিনি বলেছেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ত্ঋর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

পূর্বের খবরবিএনপি–জামায়াত বিরোধ কত দূর যাবে
পরবর্তি খবরজিয়া মৃদুভাষী কিন্তু কঠোর প্রেসিডেন্ট