অনলাইন ডেস্ক:
শস্যভান্ডার খ্যাত হাওর পাড়ের দিরাইয়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে নির্বিঘ্নে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে কাঙ্খিত আশার ছাপ। দিনভর নানা ব্যস্ততায় সময় পার করছেন কৃষক-কিষানি। বৈশাখ মাসে হাওরাঞ্চলের ঘরে ঘরে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়ে যায়।
নতুন ধানের ম ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। গত কয়েকদিন পূর্বে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকদের মনে যে আতঙ্কের জন্ম নিয়েছিল এখন আর সেটা নেই। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ধান কাটতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
হাওর এলাকার একমাত্র ফসল বোরো ধানের ওপর নির্ভর করে চলে কৃষক পরিবারের সবকিছু। কৃষকের শ্রমে জমিতে ফলানো ধান গোলায় তুলতে কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সবাই যোগ দেন। এমন কি গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা করতে। এই ধানের ওপরই পুরো পরিবারের এক বছরের খাবার, সব ধরনের ব্যয়, বিয়েশাদি ও সন্তানদের লেখাপড়া নির্ভর করে। কৃষিকাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায় প্রযুক্তির কল্যাণে ধান মাড়াইয়ের প্রাচীন পদ্ধতি পরিহার করে তারা এখন আধুনিক মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করছেন।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ধানও কাটছে মেশিনে। ধান কেটে ঘরে তুলতে এবার শ্রমিক সংকট না থাকলেও শ্রমিকদের কদরও একেবারে কম নয়। এক বিঘা জমির ধান কাটতে কৃষকের গুনতে হচ্ছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। তবুও আশায় বুক বেঁধে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন তারা।
উপজেলার তাড়ল গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ধান রোপণের সময় জমিতে অপর্যাপ্ত পানি থাকায় ধানের চারা রোপণে অসুবিধা হলেও পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় এবার ধানের আবাদ ভালো হয়েছে।
তা ছাড়া ধান গাছে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই তেমন একটা না থাকায় কাক্ষিত ফলনে ধান ঘরে তুলতে পারছি। এক বিঘা জমিতে ২০-২৩ মণ ধান হয়েছে। তবে উপজেলার দুই একটি হাওরে শিলাবৃষ্টি ধানের কিছু ক্ষতি করেছে। এদিকে বিভিন্ন হাট-বাজারে বোরো নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০- ৯০০ টাকা মণ দরে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মনোরঞ্জন অধিকারী জানান, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে মোট ৩০ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ২৭৭ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ও ১৩ হাজার ৮১০ জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৭৮ মে টন ধান। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ২৯ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ১৩৩ টি ধান কাটার কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন ধান কাটছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করি শীগ্রই কৃষক তাদের ধান গোলায় তুলতে পারবেন।