সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে রাহুল গান্ধীর ‘জয়’

57

অনলাইন দেস্কঃ রাহুল গান্ধীকে এখন আর কারাবাসে যেতে হচ্ছে না। ‘মোদী’ পদবি অবমাননা মামলায় তার সাজা স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত, হাওয়া কি জোটের পালেও?

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে কর্নাটকের কোলারে ‘মোদী’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বলেন, “সব চোরেরই পদবি মোদী হয় কী ভাবে?” এ নিয়ে গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী ও বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদী রাহুলের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক মানহানি’র মামলা করেন।ষড়যন্ত্র করে রাহুল গান্ধীকে সাজা দেয়া হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট সুবিচার করেছে, এমনটাই মত কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীসহ অন্য দলীয় নেতৃত্বেরষড়যন্ত্র করে রাহুল গান্ধীকে সাজা দেয়া হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট সুবিচার করেছে, এমনটাই মত কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীসহ অন্য দলীয় নেতৃত্বের প্রতি।

এই মামলায় গত ২৩ মার্চ গুজরাটের সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দু’বছরের কারাদণ্ড দেয় কেরলের ওয়াইনাড়ের সাংসদ রাহুলকে। এই রায়ের পরের দিনই লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা সংবিধান ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেন।

এরপর উচ্চতর আদালতে এই সাজায় স্থগিতাদেশ চান রাহুল। সুরাটের দায়রা আদালত গত এপ্রিলে ও গুজরাট হাইকোর্ট গত মাসে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে।

সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি

শীর্ষ আদালতই ছিল কংগ্রেস নেতার শেষ ভরসা। রাহুল ও কংগ্রেসকে স্বস্তি দিয়ে সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ে শুক্রবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে আপাতত কারাবাসের খাঁড়া রইল না। সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পথও তৈরি হল।

বিচারপতি আরএস গাভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়ের সমালোচনা করেছে। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘কেন রাহুল গান্ধীকে অপরাধমূলক মানহানির মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি, দু’বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখাতে পারেনি।”

সুরাট আদালতের রায়ের ফলে ছ’বছরের জন্য ভোটেও লড়তে পারতেন না রাহুল। আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতেন না। সেই বাধাও দূর হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পর রাহুলের প্রতিক্রিয়া, “যাই ঘটুক, আমার দায়িত্ব একই থাকবে। ভারতের ভাবনাকে রক্ষা করতে হবে। আজ না হয় কাল, সত্যের জয় হয়। দেশবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ সংক্রান্ত খবরে আমি খুশি। এর ফলে মাতৃভূমির জন্য লড়ে জেতার লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মনোবল আরো বাড়বে।”

রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন আপের অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরজেডির তেজস্বী যাদব, ডিএমকের এমকে স্ট্যালিন, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা প্রমুখ নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সমর্থকদের একাংশকে বার্তা দিতে চাইলেন। লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে তৃণমূল কয়েকটি আসন কংগ্রেসকে ছেড়েও দিতে পারে। সমঝোতার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার কৌশল তৃণমূলের।”

কবে ফিরবেন সংসদে?

শুক্রবার রায় বেরোনোর পরই কংগ্রেস দাবি তুলেছে, দ্রুত রাহুলকে সংসদে ফেরানো হোক। মঙ্গলবার থেকে তিন দিন লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা। সংসদের নিয়ম অনুযায়ী, রাহুলকে এ জন্য লোকসভার সচিবালয়ে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে আদালতের রায়ের কপি।

গত মার্চ মাসে লাক্ষাদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জল আদালতের নির্দেশে সাংসদ পদ ফেরত পান। এ ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কেরল হাইকোর্ট। সেই রায়ের মাস দুয়েক পরে ফয়জলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সচিবালয়। এমনটাই হলে রাহুলের চলতি অধিবেশনে লোকসভায় যাওয়া হবে না।

‘রাহুলের লোকসভার সদস্য পদ ফেরালে গণতন্ত্রে আস্থা বাড়বে’

সিনিয়র সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে লোকসভার অধ্যক্ষ যদি রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন, তা হলে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা বাড়বে। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আগে যদি তাকে না ফেরানো হয়, তা হলে বুঝতে হবে, ভারতের বিচারব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়েছে।”

জোটের পালে হাওয়া

রাহুল গান্ধী ফের সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ পাওয়ায় দেশের কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, “সত্যমেব জয়তে। ষড়যন্ত্র করে রাহুল গান্ধীকে সাজা দেয়া হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট সুবিচার করেছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল বাড়বে। আগামী মাসে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার দ্বিতীয় পর্ব হওয়ার কথা। তার পর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”

রাহুল অব্যাহতি পেলেও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নির্বাচনী ফলে বিরাট প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না সুদীপ্ত। তার মতে, “জোট রাহুলের ভোটে দাঁড়ানোর দিকে তাকিয়ে নেই। তিনি ভোটে লড়লেও বিশাল কিছু হবে না। মোদীর সুপারহিরো ইমেজের প্রতিস্পর্ধী নন রাহুল।”

মোদী বনাম রাহুল

‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতা কে হবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে হবে বলে নেতৃত্ব জানিয়েছেন। বিজেপি এই নেতার প্রশ্নেই বারবার কটাক্ষ করে বিরোধীদের। শুভময়ের বক্তব্য, “বিজেপির বিপরীতে কংগ্রেসই সবচেয়ে বড় দল, জোটের বাকিদের তুলনায় বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা তাদের বেশি। আদালতের রায়ের পর রাহুলকে মোদীর বিরুদ্ধে খাড়া করতে চায় বিজেপি। এটা তাদের কৌশল।”

আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব জোটের বৈঠকে কৌশলে এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন, সোনিয়া গান্ধীর পুত্রই ‘ইন্ডিয়া’র মুখ। শুক্রবার দিল্লিতে প্রবীণ নেতা নিজে মাংস রেঁধে রাহুলকে খাইয়েছেন বলে সূত্রের খবর। রকমারি বিহারি মশলার সুস্বাদু মিশেল ছিল তাতে। জোটের ২৬ দলের রসায়ন কি তেমনই সার্থক হবে?

পূর্বের খবরদুর্নীতির অভিযোগে ইমরান খান লাহোরের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার
পরবর্তি খবরবিএনপিতে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে গুরুত্ব বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরাই পাচ্ছেন