মৃত্যুর আগের দিনও অফিস করেন ফজলুর রহমান
সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান আজ সোমবার ভোর চারটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্য ও সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগের দিনও তিনি অফিস করেন।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, অন্য দিনের মতো গতকাল রোববারও তিনি (ফজলুর রহমান) অফিস করেন। বেলা দেড়টায় তিনি অফিসে যান। এরপর নিয়মিত সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অফিস থেকে বের হন।
ফজলুর রহমানের বড় ভাই মো. শাহজাহান জানান, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এই শিল্পপতি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আসর নামাজের পর গেন্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে ফজলুর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় ফজলুর রহমানের মরদেহ আনার পর সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁদের শোক প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা ফজলুর রহমানের বিষয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘ফজলুর রহমান ছিলেন দেশের শিল্প খাতের অন্যতম একজন ক্যাপ্টেন। দেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পর্যায়ে এসেছে, তাতে তাঁর মতো ব্যবসায়ীর বড় অবদান রয়েছে। দেশে ঋণখেলাপিসহ কত সমস্যা রয়েছে। কিন্তু গত ৩০ বছরে ফজলুর রহমানের বিষয়ে এ রকম কিছু শুনিনি।’
ব্যক্তি হিসেবেও ফজলুর রহমান অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, তাঁর আতিথেয়তা ছিল অসাধারণ। সবাইকে সম্মান দিয়ে আস্তে করে কথা বলতেন। ঠিকভাবে সামাজিক দায়িত্বও পালন করার চেষ্টা করেছেন তিনি। পুরান ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালের মতো আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ তাঁর বড় মনের পরিচয় বহন করে।
সেলিম আর এফ হোসেন আরও বলেন, ‘তাঁর মৃত্যু দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। আশা করছি, তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম ফজলুর রহমানের ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি ছিলেন একজন সৎ ও প্রকৃত উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীরা যখনই তাঁর কাছে গেছেন, সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন।
ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে দোকান মালিক সমিতির উদ্যোগে আগামীকাল মঙ্গলবার দোয়া অনুষ্ঠান ও বাজারগুলোয় কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে বলে জানান তিনি।
সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের সঙ্গে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে পিতার মতো করে দেখেছি। তিনি হাতে–কলমে আমাকে সব কাজ শিখিয়েছেন।’
ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মঈনুদ্দিন হাসান রশীদ, ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা হাসান মাহমুদ রাজা, বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী গুলশানে ফজলুর রহমানের বাসভবনে যান।
১১ ভাই-বোনের মধ্যে ফজলুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। ২০২১ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কিশোর বয়সে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় নিজেদের বসতবাড়ির আঙিনায় মাত্র ৪২ টাকা পুঁজিতে একটি মুদিদোকান খুলে ব্যবসা জীবন শুরু করেছিলেন তিনি।
পরে ফজলুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে সিটি গ্রুপ। ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধন, চাল-ডাল, আটা-ময়দা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পোলট্রি খাদ্য, জাহাজনির্মাণ, চা–বাগান, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে সিটি গ্রুপের ব্যবসা রয়েছে।
সিটি গ্রুপের বর্তমানে ৪০টি প্রতিষ্ঠান আছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, সিটি গ্রুপের বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান ১৫ হাজারের বেশি। বার্ষিক বেচাকেনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে।
ফজলুর রহমান একাধিকার সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও তিনি সেরা প্রবীণ করদাতা নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি এশিয়া ওয়ান ‘গ্রেটেস্ট লিডার ২০২০-২১’ সম্মানে ভূষিত হন।
ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শোকবার্তায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ফজলুর রহমান অত্যন্ত স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনীতির বিকাশসহ একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর অবদান সবাই স্মরণ রাখবে। একটি শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি সারা জীবন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন টিপু মুনশি। তিনি ফজলুর রহমানের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তার মৃত্যুতে ‘বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন’ বোমার পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক একেএম শরিফুল ইসলাম খান গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি এক শোক বার্তায় বলেন, ‘তাঁর মৃত্যু দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। ফজলুর রহমান ছিলেন একজন সৎ ও প্রকৃত উদ্যোক্তা। দেশের অনেক উদ্যোক্তা তৈরির কারিগরও।যখনই কেউ তাঁর কাছে গেছেন,তখন তিনি তাকে খালি হাতে ফেরান নাই।