সংসদ নির্বাচনের তফসিলের পরে বিএনপির আন্দোলন তীব্র হবে

194

ঢাকাঃ দেশের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘিরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি আসতে পারে। ইতোমধ্যে নতুন কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপি নেতারা।

গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। পরের দিন রাতে বসেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। উভয় বৈঠকেই নতুন কর্মসূচির বিষয়ে কথা হয়। কথা হয় তিন দফায় পালিত অবরোধ কর্মসূচি নিয়েও। বৈঠকে বিএনপির অনেক নেতা বলেন, অবরোধের মাধ্যমে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

Image not found

যুগপৎ আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর তা বাতিলের দাবি জানিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দুই দিনের সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে দাবি না মানলে ইসিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে ফিরবেন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, দেশ-বিদেশের কেউই বিশ্বাস করেন না যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সম্প্রতি দুই উপনির্বাচনেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হতে পারে। মূলত তফসিল ঘোষণার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী আন্দোলনের তীব্রতা ও সময়সূচি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আন্দোলন যেখানে গেছে, যেভাবে জনগণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাতে দিনে দিনে আন্দোলনের তীব্রতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ২৮ অক্টোবর

থেকে গতকাল পর্যন্ত তাদের অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ২০৮টি।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বিএনপি অনেক নীতিনির্ধারক মনে করেন, আন্দোলন অব্যাহত থাকলে সরকার ঘরে-বাইরে আরও চাপে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকার সহজে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বিতর্কিত নির্বাচন করতে পারবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলন আরও জোরদার করতে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে বলেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, তফসিলের পর চলমান ধরপাকড় নিয়ে ইসির ভূমিকা কেমন দাঁড়ায়, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তফসিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে ইসি। তাই তফসিলের পর তা বাতিল করার দাবি তোলা হবে। তখন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। তখনো যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের মতো গণহারে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে, তাহলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তফসিলের পর সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করতে পারবে। তখন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইসিকে। ইসির আচরণও যদি সরকারের মতো হয়, তাহলে প্রমাণ হবেÑ দেশে একতরফা নির্বাচনই হতে যাচ্ছে।

বিএনপি চলতি মাসে ১৯ জেলায় কর্মসূচি দেবে

সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসেই ১৯ জেলায় নতুন কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি। তবে কর্মসূচি কী হবে, সে সিদ্ধান্ত গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। রোডমার্চ কিংবা সমাবেশ- এই দুধরনের কর্মসূচির বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন। সেখানেই নতুন কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুত করা হয়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগামীতে একদফা দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি আসবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই একদফা মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।’দলীয় সূত্র অনুযায়ী, সম্ভাব্য ১৯ জেলার তালিকায় রয়েছে- ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বরিশাল, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালী। দু-একটি জেলা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায়ও নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। এ বৈঠকে সবার মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী কমিটির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দুটি প্রস্তাবনা পাঠান। সে ক্ষেত্রে রোডমার্চ হলে তা এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাবে। আর সমাবেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে- কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর জেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ ছাড়া নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সমমনা রাজনৈতিক দলেরও মতামত নেওয়া হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।’ দলের আরেকটি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বিভাগে ‘তারণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত করেছিল। গতকাল তা ঘোষণা করার কথাও ছিল। কিন্তু গতকাল দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বিএনপি বৃহত্তর ১৯ জেলায় কর্মসূচি করলে তারুণ্যের রোডমার্চ দেওয়া হতে পারে দুই বিভাগে।’ উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চ একদফা দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের উত্তরাঞ্চলে (রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে) রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’যুবদল সভাপতি বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আপাতত দুদিনের কর্মসূচি দিলাম। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।’ সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি রোডমার্চের শুরুতে এবং শেষে দুটি জনসভা হবে এবং পথে আরও বেশ কিছু পথসভা হবে। বিগত দিনের মতো মোটরসাইকেলসহ যে যার মতো করে এই রোডমার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।’ সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল ঢাকায় সমাবেশআন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এ দিন একই কর্মসূচি পালন করবে সরকারবিরোধী চলমান যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল ও জোটও।

পূর্বের খবরদেশে জন্মসনদের জন্য সীমাহীন ভোগান্তি
পরবর্তি খবরপ্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন