নিউজ২১ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সরকারি সফরে সোমবার (৮ জুলাই) চীনে যাচ্ছেন।এ সফরে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক সই এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। রবিবার (৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা আছে।”
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভার মাধ্যমে গ্রেট হলে এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কর্মকর্তারা।
সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইট যোগে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা। একই দিন চীনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে এবং অভ্যর্থনা জানানো হবে।।
পরদিন (৯ জুলাই) সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন সাংগ্রিলা সার্কেলে ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। সম্মেলনটিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে।
ওইদিন দুপুরে চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হিউনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বিকালে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।
এরপর রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সফরের তৃতীয় দিনে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে চীনের প্রিমিয়ার অফ দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
পরে, শেখ হাসিনা ও লি ছিয়াং দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।
একই দিন বিকালে গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর, বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি দেবে।
বুধবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন ত্যাগ করবেন এবং দুপুর ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন।
সফরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরো জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন দেবে।
ড. হাছান বলেন, চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক “কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব”পর্যায়ে উন্নীত হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
চীনের আমন্ত্রণ
এর আগে, চীন জানায় যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করবেন।বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, “স্টেট কাউন্সিলের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীনে সরকারি সফর করবেন।”
মাও নিং বলেন, নতুন মেয়াদ শুরু হওয়া এবং চীনে তাঁর শেষ সফরের পাঁচ বছর পর এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম চীন সফর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন এবং তার সঙ্গে আলোচনা করবেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার নথি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
মুখপাত্র বলেন, “দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন, কীভাবে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব গভীর এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতা প্রসারিত করা যায়। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় করবেন।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, “উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশ একে অপরকে সম্মান ও সমতার সঙ্গে আচরণ করেছে। পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতায় জড়িত হয়েছে। আমাদের নিজ নিজ মূল স্বার্থ সম্পর্কিত ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং যৌথভাবে আধুনিকীকরণ করেছে।”
তিনি বলেন, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছেন। “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দুই দেশের নেতাদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে দুই পক্ষ বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সহযোগিতা মূলক অংশীদারত্ব গভীর করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ও বাস্তব সহযোগিতা করেছে;” আরো বলেন তিনি।
মুখপাত্র বলেছেন, “এই সফরের মাধ্যমে পাঁচটি মূলনীতির চেতনা সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। মূলনীতিগুলো হলো- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা গভীর করা, উন্নয়ন কৌশল আরও সমন্বয় করা, উচ্চমানের বেল্ট-রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ-বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন স্তরে উন্নীত করা।”