১.
তিনি লাল মিঞা কিংবা সুলতান, আমাদের পোষাকী ভাষায় এস.এম.সুলতান। বিশ্ববরেণ্য বাঙালি চিত্রশিল্পী সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে মহান এই শিল্পীর জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে এবার। জন্মশতবর্ষে ‘বিশ্ব মানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ শাশ্বত বাঙালি হ’–কে ধারণ করা অনন্য এই শিল্পীর অমর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, শিল্পী সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। জীবিতকালে এই মহান চিত্রশিল্পীকে ঢাকায়, চারুকলায় একাধিকবার দেখবার, কথা বলারও সুযোগ আমার জীবনে এসেছিলো, সে জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি চিন্তক মহাত্মা আহমদ ছফাকে। ছফা ভাইয়ের কারণেই চারুকলাসহ বিভিন্ন জায়গায় শিল্পী সুলতানের দেখা ও কথা শোনার, তাঁর সাথে কথা বলার বিরল সুযোগ ঘটে আমার। শিল্পী সুলতানের মৃত্যুর দুই দশক পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসএম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা ও শিশুস্বর্গের বিভিন্ন কার্যক্রমও দেখে আসার সৌভাগ্য আমার হয়। সেই অভিজ্ঞতা লেখার সুযোগ আর হাতছাড়া করার লোভ সামলাতে পারিনি। সে সব কথাও থাকলো লেখায়।
২.
এসএম সুলতানকে নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক।
বোধ করি বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পীকে নিয়ে, তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে, এতো তোলপাড় করা ইতিবাচক ও নেতিবাচক তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। সুলতানের নির্লোভ স্বভাব, বোহেমিয়ান জীবন এ সবকিছুই একেবারে আলাদা সুশীল সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পবলয় থেকে। যে-শিল্পচর্চার আঙ্গিক গঠিত হয়েছিল দুশো বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির শাসন শুরুর মধ্য দিয়ে,সুলতান প্রত্যাখ্যান করেছেন এই ঔপনিবেশিক দাসত্ব। সুলতানকে অনেকে দেখেন প্রান্তিক শিল্পী হিসেবে, অনেকে তাঁর শিল্পকর্মের গুণ বিচার করেন তাঁকে নেইভ (বন্য) বলে। আবার সুলতানের মৌলিকত্ব নিয়ে মহাত্মা আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘তবু তাদের কোনো পূর্বসূরি নেই, নেই কোনো উত্তরসূরি। আচমকা জলতল থেকে সুবর্ণস্তম্ভের মতো উত্থিত হয়ে দণ্ডায়মান হয়ে রয়েছে।’ নানা মুনির নানা মত থাকবেই। মনে পড়ছে, ‘ক্যামেরার কবি’ নাসির আলী মামুনের সাথে আলাপনে মনীষী আহমদ ছফা সুলতানকে ‘মহামানব’ হিসেব্যে আখ্যায়িত করে স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি, সেই তিনিই আবার লিখেছেন, ‘তিন দিনের বেশি একসাথে থাকলে তাকে সহ্য করা যেতো না। মনে হতো তাকে খুন করি’। উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক নয় মোটেই, এক দশককালজুড়ে নাসির আলী মামুন আলোকচিত্র গ্রহণ করেছেন ভবঘুরে শিল্পী এসএম সুলতানের নিঃসঙ্গ পরিযাত্রা- তাঁর উদ্দীপনা, তাঁর আধার এবং তাঁর সংগ্রাম, যা তিনি তাঁর বিশাল ক্যানভাসে মানবসত্তার পুনর্জন্মদানকালে অনুভব করেন। নাসির আলী মামুনের ক্যামেরা ক্রমান্বয়ে তুলে ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুলতানের সংলগ্নতা এবং কীভাবে তিনি সেসব মানুষের কথা বলেন, যারা যুগ যুগ ধরে সভ্যতার উন্নতিকল্পে ঘাম ঝরিয়েছেন। কিংবদন্তি এই শিল্পীর মহাজাগতিক পরিভ্রমণের বহু গোপন ও অজ্ঞাত মুখচ্ছবি নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় অমর হয়ে রয়েছে। যেমনটি জীবন্তসত্তা হিসেবে অস্মরণীয় স্মৃতিচিত্র হয়ে সজীব আছেন তারেক মাসুদের অসাধারণ তথ্যচিত্র ‘আদম সুরত’-এ।
৩.
স্বর্গে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে মোটেই ভাবিত নই আমি, কোনকালেই ততটা লোভীও ছিলাম না বটে, তবে অনেকদিন ধরেই যাবো যাবো করেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি প্রিয় শিল্পী এসএম সুলতানের শিশুস্বর্গে নড়াইলে যাওয়া। যশোর সরকারি এমএম কলেজে মাস্টার্সের মৌখিক পরীক্ষার বহি:পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে তাই আর মিস করিনি নড়াইল গিয়ে এসএম সুলতানের স্মৃতিসংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যশোরের সুপ্রিয় স্বজন, শিক্ষক বন্ধু আশুতোষের সাথে সাধ মিটিয়ে ঘুরতে গেলাম বহুকাংখিত সুলতান রাজ্যে। সেখানে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ‘এসএম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা’ বন্ধ দেখে নিরাশ না হয়েও দু’বন্ধু শরণাপন্ন হলাম আমার আরেক প্রিয়জন মেহেদি’র আবাল্য সহপাঠী-বন্ধু এবং নড়াইল সদরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শাহ আব্দুল সাদীর। আক্ষরিক অর্থেই তিনি কয়েক মুহুর্তেই আমাদের প্রিয়জন, বন্ধু হয়ে উঠলেন, ‘অতুলনীয়’ সমাদরে, পরমাত্মীয় জ্ঞানে সহযোগিতাও করলেন। তিনি নিজেও সঙ্গও দিলেন সারাক্ষণ। অমায়িক ভদ্রলোক এবং সদালাপী সাদী ভাইয়ের চমৎকার সুসঙ্গ ছিলো আমার জন্য ‘বোনাস’ উপহার। তাঁর কারণেই ‘এসএম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা’ ঘুরে দেখার সুযোগ পেলাম, দায়িত্বশীল কর্মীদের কাছ থেকে নানা তথ্য-স্মৃতিও জানতে পারলাম। সেখান থেকে চিত্রা নদীর তীরে বৃষ্টিভেজা পূর্ণিমামাখা মনোরম সন্ধ্যার জম্পেশ আড্ডার অভিজ্ঞতাই ‘অতুলনীয়’ই বটে। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই সাদী ভাই, বন্ধু মেহেদি ও আশুতোষকে।
৪.
পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে বিশ্বের নামিদামি আঁকিয়ের চিত্রশিল্পগুলোর সাথে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের অখ্যাত এক গ্রাম্য শিল্পীর ছবি। সেই সময় চিত্রশিল্প বাংলাদেশে এতোটা প্রভাব বিস্তার করেনি, শিল্পবোদ্ধাও আজকের মতো এতো ছিল না বলে আধুনিক সমাজে বিশ্ব জয় করা নড়াইলের এক তরুণ শিল্পীর কথাও কান এড়িয়ে যায় সকলের। একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার নাম ছড়িয়ে গেলেও নিজের দেশেই তিনি অনাবিষ্কৃত! কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর সেই শিল্পীর কথা আর অজানা থাকে না বাংলাদেশের মানুষের। ১৯৭৬ সালে তাই রাজধানী ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশ্বজয়ী চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানকে। যিনি জীবনের অর্ধেকটা সময়ই কাটিয়ে এসেছেন নড়াইলের এক গ্রামে, যদিও ইউরোপ, আমেরিকায় জীবন যাপনের সুযোগ ছিল তাঁর। চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রথমবার নড়াইল থেকে ঢাকায় আসেন এস এম সুলতান, দেশের শিল্পসমাজে নতুন করে পরিচিতি পান তিনি। কী ছিলেন সুলতান? সুলতান আদ্যোপান্ত মানুষ ছিলেন। যে প্রচলিত জীবনের লোভ–লালসা ছেড়ে শিল্পের ভেতর দিয়ে কোথাও পৌঁছেছিলেন সুলতান, তখন তিনি আর নিছক শিল্পী নন। বরং এক উত্তীর্ণ মানুষ। শিল্প নিছক শিল্প নয়, শিল্প হলো জীবন, এক নিবিড় অনুসন্ধান। সেই অনুসন্ধানে ব্রতী জীবন-শিল্পী, বাংলার লোক-আত্মা খুঁজে ফেরা এস এম সুলতান। জীবন–শিল্পী কাটিয়েছেন শিল্পের মনুষ্য জীবন। তাঁর শিল্পচেতনায় ছিল স্বদেশ-ঐতিহ্য, প্রকৃতি-পরিবেশ ও মানুষ৷ মানুষ যে শক্তিময়তার দিক থেকে অনেক বড়- এ সত্যের পরিচয় মেলে সুলতানের সৃষ্টি করা ক্যানভাসে চোখ রাখলেই৷ তাঁর ছবিতে কখনো কৃশকায় মানুষ দেখা যায় না, দেখা যায় পেশীবহুল স্বাস্থ্যবান অবয়ব৷ প্রগাঢ় সাহসী জীবনবোধের এক নিবিষ্ট চিত্রকর এস এম সুলতান। “আমি আমার বিশ্বাসের কথা বলছি৷ আমার সকল চিন্তা, সবটুকু মেধা, সবটুকু শ্রম দিয়ে যা কিছু নির্মাণ করি তা কেবল মানুষের জন্য, জীবনের জন্য, সুন্দর থেকে সুন্দরতম অবস্থায় এগিয়ে যাবার জন্য৷ আমার ছবির মানুষেরা, এরা তো মাটির মানুষ, মাটির সঙ্গে স্ট্রাগল করেই এরা বেঁচে থাকে৷ এদের শরীর যদি শুকনো থাকে, মনটা রোগা হয়, তাহলে এই যে কোটি কোটি টন মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুসকল আসে কোত্থেকে? ওদের হাতেই তো এসবের জন্ম৷ শুকনো, শক্তিহীন শরীর হলে মাটির নিচে লাঙলটাই দাব্বে না এক ইঞ্চি৷ আসলে, মূল ব্যাপারটা হচ্ছে এনার্জি, সেটাই তো দরকার৷ ঐ যে কৃষক, ওদের শরীরের অ্যানাটমি আর আমাদের ফিগারের অ্যানাটমি, দুটো দুই রকম। ওদের মাসল যদি অতো শক্তিশালী না হয় তাহলে দেশটা দাঁড়িয়ে আছে কার উপর? ওই পেশীর ওপরেই তো আজকের টোটাল সভ্যতা।” কথাগুলো ছবিপ্রাণ মানুষ এস এম সুলতানের। যে সুলতানের জীবন রহস্যাবৃত,প্রহেলিকাময়। কিন্তু তাঁর ছবিতে নেই দূর-নির্ণেয় প্রপঞ্চ। যদি আমরা তাকে বাউল বলি তিনি কিন্তু তা ছিলেন না। তিনি এক ধরনের বোহেমিয়ান কিন্তু তার আবার গৃহও ছিল। অনেকটা হাফ-গেরস্ত মানুষ। সুলতানের জীবন ছিল মানুষের কল্যাণে এবং যার জন্য তিনি পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরালেন। তিনি হয়ত যে কোন সাধারণ বস্তুগত সুখ নিয়ে তথাকথিত সুখি জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু তিনি শিল্পের জন্য নিবেদিত ছিলেন সেজন্য তিনি ছবি এঁকে গেছেন, স্কুল করেছেন শিশুদের জন্য। শুধু শিশুদের নয়, প্রকৃতির সবকিছুই তিনি ভালবাসতেন। তাঁর ছবির প্রধান বিষয় মানুষ, বলা যায় মানুষ ছাড়া আর কিছুই তিনি চিত্রার্পিত করেননি। সুলতানের ছবিতে দেবতার চেয়েও শক্তিধর মানুষ। তাদের মুখের অভিব্যক্তিতে আছে একনিষ্ঠ বিশ্বাসের ব্যঞ্জনা।
৫.
শিল্পীর বাসভবন, শিশুস্বর্গ ও সমাধিস্থল ঘিরে ‘এসএম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা’ নির্মাণ করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত বিভাগ ২০০১ সালের জুলাইয়ে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৩ সালের জুনে কাজটি শেষ হয়। ২০০৬ সালের অক্টোবরে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয় সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। দেখভালের জন্য চুক্তিভিত্তিক ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রথমদিকেই তা বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে একজন সহকারী কিউরেটর ও মালি আছেন। লোকবলের অভাবে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আসা সুলতানভক্তরা সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা তালাবদ্ধ দেখে হতাশ মনে ফিরে যান। সংগ্রহশালায় রাখা সুলতানের ছবি ও ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হতে চলেছে। তবে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এসএম সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা ও শিশুস্বর্গের কার্যক্রম। প্রতিদিন বহু মানুষ ঘুরতে আসেন সুলতানের বাড়িতে। কিন্ত তাঁরা হতাশ হন। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় সুলতানের দুর্লভ চিত্রকর্মসহ তাঁর ব্যবহার্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুলতানপ্রেমী দর্শনার্থীরা সুলতানের দুর্লভ শিল্পকর্ম ও স্মৃতিগুলো পুরোপুরি দেখতে পারছেন না। ফলে সুলতানপ্রেমী দর্শকরা এখানে এসে শিল্পকর্ম ও স্মৃতিগুলো দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল নয়। থাকার কোন ভাল ব্যবস্থা নেই। সুলতান কমপ্লেক্স ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবিও রয়েছে উপেক্ষিত। শিল্পী সুলতান ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে শিশুদের জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত দ্বিতলা ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ (নৌকা) নির্মাণ করিয়েছিলেন। এ নৌকায় চড়ে শিশুদের নিয়ে নিয়মিত বের হতেন এবং চিত্রা নদীর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ছবি আঁকা শেখাতেন সুলতান। সুলতানের মৃত্যুর পর অযত্নে ও অবহেলায় রয়েছে ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ। এখন সংগ্রহশালার পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ। এই অবস্থার মধ্যে প্রতিবছর তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। যদিও নড়াইলে রয়েছে জমিদারদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, উদয়শংকর, পণ্ডিত রবিশংকর, বিজয় সরকার, মোসলেম উদ্দিন, কমল দাশগুপ্তসহ অনেক খ্যাতিমান গুণীজন। অথচ পর্যটন শিল্পে নড়াইল একেবারে পিছিয়ে, যা দুই-একটি হয়েছে তা ব্যক্তি উদ্যোগে। তাই সুলতান সংগ্রহশালাকে পর্যটনকেন্দ্র করে গড়ে তোলা হলে নড়াইল জেলা সমৃদ্ধ হবে। প্রতি বছরই জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়ে থাকে।
৬.
শিশু, বৃক্ষ, মানুষ, প্রকৃতি- সবকিছুর প্রতিই তাঁর অফুরন্ত ভালবাসা। চিরকুমার শিল্পী ছবি এঁকেছেন দুই হাতে। ব্যবহার করেছেন দেশজও লতাপাতা শেকড়ের নির্যাস থেকে সংগৃহীত রঙ। মোট ছবির সংখ্যা তিনি নিজেও জানতেন না। যা তিনি কখনও সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করেননি। যাঁকে খুশি তাঁকে দিয়েছেন অকাতরে। নড়াইলে তাঁর শিশুস্বর্গ,যেখানে বাস করতেন, সেখানে বৃক্ষ এবং দুর্লভ ফুলে ভরা ছিল। ছিল বহু পাখি ও জীব জন্তু। তাদের নিজ হাতে তিনি সেবা করতেন। শুধু রঙতুলির স্পর্শে এর মধ্যে তিনি সৌন্দর্য অন্বেষণ করেননি, বাস্তবেও প্রমাণ দিয়েছেন ভালবাসার। তাই ঢাকার ফুটপাথ থেকে দুর্লভ নাগলিঙ্গম বৃক্ষ নিধন হতে দেখে তার চোখ প্লাবিত হয়েছিল। বলতেন, এত একটি বৃক্ষের নিঃশেষ নয়, গোটা জীবনের পরিসমাপ্তি। সারাজীবনের সমস্ত সঞ্চয় তিনি ব্যয় করেন শিশুদের কল্যাণে নির্দিধায়। সেই মহান মানুষটি হলেন এসএম সুলতান।
৭.
নদীটির নাম চিত্রা। এটি নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে৷ মাছিমদিয়া গ্রামেই কয়েকটি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে ধাউড়িয়া বাড়ি। ধাওড়িয়া বাড়ির লোক মেছের নড়াইলের জমিদার বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্ত্রী, ছেলে লালমিয়া ও মেয়ে ফুলমণিকে নিয়ে তাঁর চারজনের সংসার। অভাব অনটন লেগেই আছে এ সংসারে। অভাবের এই সংসারে লালমিয়া জন্মগ্রহণ করেন। মেছের ধাওড়িয়ার একার উপার্জনে চলে এই সংসার। কিন্তু লালমিয়া ও ফুলমণিকে রেখে মেছেরের স্ত্রী হঠাৎ মারা গেলে অভাবের সংসারে দেখা দেয় নতুন সংকট। ছেলেমেয়ে ও সংসারের কথা চিন্তা করে মেছের আবার বিয়ে করেন নড়াইল থানার দুর্গাপুর গ্রামের আয়াতুন্নেসাকে। পরিবারের আভাব-অনটন তখনো তাঁদের নিত্যসঙ্গী। কারণ রাজমিস্ত্রীর কাজ করে যা আয় করেন তার পরিমাণ খুব সামান্য ৷
৮.
সুলতানের পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। তবে এসএম সুলতান নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। পরিবারের লোকজন শৈশবে তাঁকে লাল মিয়া বলে ডাকত। প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও তাঁর পিতা ১৯২৮ সালে তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু অন্য সব ছেলেমেয়ের মতো শুধু লেখাপড়া আর খেলাধূলা করবে তেমন কপাল লালমিয়ার ছিল না। তাঁকে বাবার কাজে সহযোগিতা করতে হত। যদিও লালমিয়ার বাবার ইচ্ছে ছিল তাঁকে ভালোভাবেই পড়াশোনা করাবেন,কিন্তু সামর্থ হয়নি তাঁর৷ সংসারের অভাবের যন্ত্রণার সাথে যোগ হয় লালমিয়ার উপর সৎ মায়ের অত্যাচার৷ এভাবেই চলছিল লালমিয়ার পড়াশোনা,বাবার কাজে সহযোগিতা আর বাঁশি বাজানো। অদ্ভুত সুন্দর বাঁশি বাজাতেন লালমিয়া। তাঁর এই বিশেষ গুণটির কথা স্কুলের সহপাঠীসহ এলাকার সব মানুষরা জানত৷ নড়াইলের জমিদার বাড়ির পুকুর ঘাট, স্কুলের অনুষ্ঠান ছাড়াও বনবাদারে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজাতেন তিনি। সে কারণে বংশীবাদক হিসাবে লালমিয়াকে অনেক মানুষ চিনত৷ এমন কথাও শোনা গেছে, জমিদার বাড়ির পুকুর ঘাটে লালমিয়া বাঁশি বাজানোর সময় কলো কেউটে সাপ দুই পাশে নাচত৷ছবির প্রতিও ছিল লালমিয়ার ভীষণ টান। কোনোকিছু ভাল লাগলেই ছবি আঁকতেন। আঁকতেন চকখড়ি, কাঠকয়লা, হলুদ আর পুঁই ফলের রস দিয়ে৷ ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর তাঁর বাবার ইচ্ছাতেই লালমিয়া এ.বি.এস. জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় লালমিয়া সৎ মায়ের সাথে ঝগড়া করে তিন আনা বারো পয়সা, একটি ছাতা, গুটিকয় জামা-কাপড় আর একটি ঠিকানা নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। বোন ফুলমণি মা হারা ভাইয়ের পিছু নেয়। ‘ফিরে আয়, ফিরে আয়’ বলে কাঁদতে কাঁদতে ডেকে আকুল হয়। লালমিয়া ফেরেননি। যেতে যেতে বোনকে বলেছিলেন, ‘তুই ফিরে যা, আমি আবার আসব।’ হাঁটতে হাঁটতে সেদিন হাটবাড়িয়া লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত আসেন। লঞ্চ ঘাট থেকে সোজা গিয়ে উঠলেন কোলকাতায় নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়বাহাদুরের বাড়িতে। এখান থেকেই মাছিমদিয়ার লালমিয়ার জীবনের আরেক অধ্যায়ের শুরু।
৯.
এর আগে দশ বছর বয়সে স্কুল পরিদর্শনে আসা ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ছবি এঁকে তাঁর চোখে পড়েছিলেন। সুলতানের ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা শিখবেন। কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি সে ইচ্ছার পথে ছিল বড় বাধা। এসময় এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এস.এম সুলতান ১৯৩৮ সালে কলকাতা যান। কলকাতায় এসে তিনি ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতেই ওঠেন। ইচ্ছা ছিল কোনো কাজ জোগাড় করে অর্থ উপার্জন এবং একই সাথে শিল্প শিক্ষা। এ সময়ই তিনি প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। সুলতানের জন্য সোহরাওয়ার্দী তাঁর গ্রন্থাগারের দরজা উন্মুক্ত করে দেন এবং তাঁকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকেন। ১৯৪১ সালে সুলতান কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন, যদিও ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা তাঁর ছিল না। এ ব্যাপারে শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান ছিল মুখ্য। তিন বছর আর্ট স্কুলে পড়াশোনার পর তিনি বেছে নেন একজন ফ্রি-ল্যান্স শিল্পীর জীবন।
১০.
আর্ট স্কুলের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার রীতিনীতি তাঁর সহজাত বোহেমিয়ান জীবনযাত্রার সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছিল। সুলতান ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে তিনি ছিলেন ভবঘুরে বা ছন্নছাড়া। তিনি প্রকৃতিকে ভালবাসতেন একজন রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে এবং সেরকম তীব্রতা নিয়েই তিনি অস্বীকার করেছেন যান্ত্রিকতা-পিষ্ট নগর ও নাগরিক জীবনকে। ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়েন উপমহাদেশের পথে পথে। তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। ছোট বড় শহরগুলিতে ইংরেজ ও আমেরিকান সৈন্যদের ছবি এঁকে ও তাদের কাছে ছবি বিক্রি করে জীবন ধারণ করেছেন এবং প্রদর্শনীও করেছেন। শিল্পী হিসেবেও তিনি তখন কিছুটা পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে ছিল পার্থিব বিষয়ের প্রতি অনীহা এবং কোনো এক স্থানে শিকড় ছড়িয়ে বসার প্রতি তীব্র অনাগ্রহ। এ কারণে তখনকার আঁকা ছবির নমুনা,এমনকি ফটোগ্রাফও এখন আর নেই। তবে সে সময় প্রধানত তিনি নিসর্গ দৃশ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। কাশ্মীরে কিছুদিন থেকে তিনি অনেক ছবি এঁকেছিলেন। বৃটিশ এক মহিলার আগ্রহে ১৯৪৬ সালে সিমলায় তাঁর আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়।
১১.
দেশ বিভাগের পর সুলতান কিছুদিনের জন্য দেশে ফেরেন। কিন্তু তারপরই ১৯৫১ সালে করাচি চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলে শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুবছর কাজ করেন। এ সময়ে চুঘতাই ও শাকের আলীর মতো শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। ইতি:পূর্বে ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পিদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি আমেরিকা যান এবং নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো, বোস্টন এবং এরপর লন্ডনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী করেন। ১৯৫৩ সালে আবার নড়াইল ফিরে তিনি শিশু শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। শিশুদের নিয়ে সুলতানের অনেক স্বপ্ন ছিল। শেষ বয়সে নড়াইলে ‘শিশুস্বর্গ’ ও ‘চারুপীঠ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এর কিছু বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নড়াইলে তিনি ‘নন্দন কানন’ নামের একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল এবং একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
১২.
মধ্য পঞ্চাশে ঢাকায় যখন আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনেক কাজ হচ্ছে এবং প্রচুর উৎসাহ এবং আগ্রহ নিয়ে শিল্পীরা শৈলী নিয়ে, ফর্ম নিয়ে, মিডিয়া নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তখন সকলের দৃষ্টির আড়ালে তিনি নড়াইলেই রয়ে গেলেন। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন, কিন্তু তাঁর জীবনের মূল সুরটি বাঁধা ছিল গ্রামীণ জীবন, কৃষক ও কৃষিকাজের ছন্দের সঙ্গে। সেখানেই তিনি আবিষ্কার করেছেন বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং বাঙালি জীবনের প্রধান উৎসকেন্দ্রটি, বাঙালির দ্রোহ ও প্রতিবাদ, বিপ্লব ও সংগ্রাম এবং নানান প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার ইতিহাস এবং অনুপ্রেরণা। তিনি কৃষক পুরুষের শরীরকে করেছেন পেশীবহুল এবং বলশালী, কৃষক রমণীর শরীরকে এঁকেছেন সুডৌল ও সুঠাম গড়নে, তাকে দিয়েছেন যুগপৎ লাবণ্য এবং শক্তি। হয়তো জীবনে কৃষকায়, ম্রিয়মাণ কৃষকদের দেখে দেখে কল্পনার নির্মাণে তাদের তিনি দিয়েছেন শক্তি ও স্বাস্থ্য। তবে সুলতানের ছবিতে পরিপূর্ণতা এবং প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি আছে শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রুর বাস্তবতার চিত্রও। হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) ও চরদখল (১৯৮৮) এ রকম দুটি ছবি।
১৩.
১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতান শিল্পরসিকদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যান। মধ্য সত্তরে তাঁর কিছু শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় থেকে তিনি কিছু ছবি আঁকেন এবং ১৯৭৬ সালে সেসব ছবি দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বস্ত্তত, এ প্রদর্শনীটিই তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ ছবিগুলিই সুলতানকে নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রতিনিধি এবং তাদের নন্দনচিন্তার একজন রূপকার হিসেবে উপস্থাপিত করল। তাঁর ছবিতে গ্রাম হচ্ছে বিশ্বের কেন্দ্র এবং কৃষকই হচ্ছে প্রকৃত জীবন শিল্পী। গ্রাম ও গ্রামের মানুষের মধ্যেই তিনি খুঁজেছেন তাঁর সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। এজন্য কৃষক ও কৃষকের জীবন একটা কিংবদন্তীর শক্তি নিয়ে উপস্থিত তাঁর ছবিতে। তাঁর কাজে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিল জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি,দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে,উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং উপনিবেশিকোত্তর সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপনা করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিল ‘আধুনিকতা’, অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পিদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে। সুলতানের মতো কেউ আধুনিকতার এরকম ব্যাখ্যা দেননি। তাঁর স্টাইলের ক্ষেত্রে তিনি অননুকরণীয়। তাঁর কোনো অনুসারী বা স্কুল নেই, কারণ তাঁর মতো মৃত্তিকা সমর্পিত জীবন তাঁর সময় আর কোনো শিল্পী যাপন করেননি। সুলতান তেলরঙ ও জলরঙের ছবি এঁকেছেন, ব্যবহার করেছেন সাধারণ কাগজ, সাধারণ রং ও চটের ক্যানভাস। এজন্য তাঁর অনেক ছবির রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেদিকেও তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না।
১৪.
সুলতান আশির দশক থেকে নড়াইলে থেকে যেতে অনেকটা বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর কাছে আশ্রয় নেওয়া মানুষ, শিশু এবং জীবজন্তুর প্রতি তাঁর ভালবাসার জন্য তাঁর বাড়িটিকে এদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। একটি চিড়িয়াখানা ছিল তাঁর। শিশুদের জন্য একটি বিরাট নৌকাও বানিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে সুলতানের আরেকটি প্রদর্শনী হয়। আশির শেষ দিকে তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে, ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোন-এ তাঁর শেষ প্রদর্শনীটি হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। শিল্পীর বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবন এবং কর্মযজ্ঞ এখন পর্যন্ত কোন পাঠ্যপুস্তক বা শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জন্মশতবর্ষে সেই দাবি জানাই।
লেখক- আবদুল্লাহ আল মোহন
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা