আমেরিকার ডালাসে আজীবন সম্মাননা পেলেন ফরিদা আক্তার পপি তাঁর আসল নাম। ৭০-এর দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী আজ পা রাখলেন ৭০ বছরে। চিরসবুজ অভিনেত্রী ববিতা আজও আছেন সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়জুড়ে। বাংলা চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ।
ঢাকাঃ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে বাংলাদেশি কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে শুধু ববিতা অভিনীত সিনেমাই প্রদর্শিত হয় এবং দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা।
টেক্সাসের রিচার্ডসন সিটির মেয়র বব ডুবের হাত থেকে এ সম্মাননা গ্রহণ করেন ববিতা । পাশাপাশি আরও একটি বিরল সম্মান দেয়া হলো তাকে। উৎসবে তার সম্মানে ৫ আগস্টকে ‘ববিতা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দিনটি ঘোষণা করেন ডালাসের মেয়র। প্রতি বছর ডালাসে দিনটি ‘ববিতা দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ববিতা বলেন, ‘ববিতা দিবসের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে আমাকে এবং আমার প্রিয় বাংলাদেশকে যে সম্মাননা জানানো হলো তাতে সত্যিই আমি ভীষণ গর্বিত, ভীষণ আনন্দিত। এ সম্মান শুধু আমাকেই নয়, এ সম্মান বাংলাদেশকেও প্রদর্শন করা হয়েছে। সত্যি আমি কোনোদিন কখনোই কল্পনা করিনি জীবনে এমন মুহূর্ত আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন প্রাপ্তিও যে জীবনে অপেক্ষা করছে তাও জানার বা বুঝার মধ্যে ছিল না। কিন্তু ৪ আগস্ট টেক্সাস সিটিতে আমাকে যে সম্মাননা জানানো হলো, যে সম্মান প্রদর্শন করেছেন সবাই এবং মেয়রের হাত ধরে সেখানে ববিতা দিবসের যে যাত্রা শুরু হলো তা যেন জীবনকে আরও পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। জীবন যেন আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি মুহূর্তে প্রিয় বাংলাদেশকেই মনে পড়েছে। কারণ বাংলাদেশের জন্য, সেখানকার দর্শকের জন্যই আজ আমি ববিতা, যাকে নিয়ে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হলো। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই আয়োজকদের।’
ছবিতে জেনে নেওয়া যাক ববিতা সম্পর্কে জানা–অজানা নানা তথ্য
শুটিং দেখার শখ ছিল তাঁর। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করার ভাবনা কখনো মাথায় আসেনি। প্রথম নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবির শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন তিনিছবি: সংগৃহীত
সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছা তাঁর কখনোই ছিল না। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা আর বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। ছবিটি সুপারফ্লপ হয়ছবি: সংগৃহীত
মা ছিলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ববিতা ছিলেন তাঁর সহকারী। তাঁর নিজেরও ইচ্ছা ছিল মায়ের মতো চিকিৎসক হওয়ারছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলায় ছিলেন খুব দুষ্টু প্রকৃতির। মা সবাইকে বিনা মূল্যে ওষুধ দিলেও মায়ের অনুপস্থিতিতে সবার কাছ থেকে পয়সা নিতেন, যা তাঁর মা–ও জানতেন নাছবি: সংগৃহীত
এই পয়সা জমিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে সিনেমা দেখতেন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রথম সিনেমা দেখেন গুলিস্তানের নাজ সিনেমা হলে—‘হোটেল সাহারা’ছবি: সংগৃহীত
পরিচালক জহির রায়হান আবারও ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ উর্দু সিনেমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে বললে প্রথমে যথারীতি রাজি হননি। তখন বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু ছবির বেশির ভাগ শুটিং হওয়ার পরও শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটি আর শেষ করা হলো নাছবি: সংগৃহীত
এরপর জহির রায়হান তাঁকে নিয়ে বাংলা সিনেমা বানান। মুক্তি পর সিনেমাটি সুপারহিট হয়। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সিনেমা হিট হওয়ায় আবারও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনিছবি: সংগৃহীত
এরপর ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’, সব সিনেমায়ই ছিল রাজ্জাক-ববিতা জুটি। প্রতিটিই সুপারহিটছবি: সংগৃহীত
সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই ববিতার আন্তর্জাতিক সিনেমার যাত্রা শুরু হয়। অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায়ের প্রথম রঙিন সিনেমা ‘অশনি সংকেত’–এ। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমা দিয়ে জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনিছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা। তিনি আটবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ পেয়েছেন। এ ছাড়া আছে ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ ও ‘বাচসাস পুরস্কার’সহ অসংখ্য সম্মাননা।ছবি: সংগৃহীত
আজ এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন ববিতা। কানাডায় একমাত্র ছেলে অনিকের সঙ্গে ৬৯তম জন্মদিন কাটাচ্ছেন তিনি।