ডিজিটাল এই সময়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে ভিপিএনের (VPN) জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভিপিএন ব্যবহার করে সহজেই একটি ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে কোনো ডিভাইসকে সংযুক্ত করা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে ইন্টারনেট সেবায় অস্থিরতার মাঝে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন।
অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভিপিএন তৈরি করে। এরমধ্যে কিছু ভিপিএন পেইড বা ব্যবহারের জন্য অর্থ খরচ করতে হয়। আবার কিছু কিছু কোম্পানি তাদের ভিপিএনগুলো বিনামূল্যে সব ধরনের মোবাইলে ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য সেরা তিনটি ভিপিএন (VPN)
প্রোটন ভিপিএন (ProtonVPN)
এই ভিপিএনটি তৈরি করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রোটন টেকনোলজিস এজি। প্রোটন ভিপিএন শক্তিশালী এনক্রিপশন প্রোটোকল এবং একটি কঠোর নো-লগ নীতি (ব্যবহারকারীদের আইপি অ্যাড্রেস এবং ব্রাউজিং হিস্টোরিসহ কোনো ডাটা সংগ্রহ করে না) মেনে চলে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তাকে তারা অগ্রাধিকার দেয়।
প্রোটন ভিপিএন একটি বিশ্বব্যাপী সার্ভার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। তবে বিনামূল্যে ব্যবহার করলে এই ভিপিএনের সুবিধাগুলো সীমিত আকারে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাসচেতন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি হতে পারে ভালো একটি অপশন।
WARP 1.1.1.1
WARP 1.1.1.1 তৈরি করেছে ক্লাউডফ্লেয়ার। এটি নিরাপদ এবং দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগের উপর গুরুত্ব দেয়া একটি মোবাইল অ্যাপ। নিরাপদ ব্রাউজিং এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় এটি ক্লাউডফ্লেয়ারের গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সুবিধা দেয়। যদিও প্রথাগত ভিপিএনের সব সুবিধা WARP দেয় না। তবে যেসব মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিনামূল্যে এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য সমাধান খুঁজছেন তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প।
অ্যাটলাস ভিপিএন (AtlasVPN)
পিকস্টার টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেড এই ভিপিএনটি তৈরি করেছে। অ্যাটলাস ভিপিএন শক্তিশালী এনক্রিপশন এবং নো-লগ নীতিসহ নিরাপদ ব্রাউজিং অফার করে। ফ্রি প্ল্যানটিতে মৌলিক কিছু ফিচার ব্যবহার করা যায়। তবে এটি আপনাকে অনলাইনে পরিচয় গোপন রাখার সুযোগ দেবে।
মনে রাখা ভালো, ফ্রি ভিপিএনে সাধারণত নানান সীমাবদ্ধতা থাকে। এর মধ্যে থাকতে পারে ডাটার সীমাবদ্ধতা, ধীর গতি এবং সীমাবদ্ধ সার্ভার অ্যাক্সেস।
ফ্রি ভিপিএন নির্বাচন করার আগে, সতর্কতার সঙ্গে আপনার প্রয়োজন বিবেচনা করুন। যদি শুধুমাত্র বেসিক কিছু কাজের জন্য মাঝে মাঝে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তাহলে বিনামূল্যের প্ল্যানই যথেষ্ট হতে পারে। তবে ভারী ব্যবহার বা কাজের জন্য অর্থ খরচ করে প্ল্যান কেনা লাগতে পারে। সবক্ষেত্রে সুস্পষ্ট গোপনীয়তা নীতি এবং নিরাপত্তার ট্র্যাক রেকর্ডসহ স্বনামধন্য ভিপিএনটি বেছে নিন।
ভিপিএন নিয়ে মুখ খুললেন মোস্তাফা জব্বার
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) নিয়ে এবার মুখ খুললেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে ভিপিএন নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন সাবেক এই মন্ত্রী।
মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বিষয়টি খুব স্বাভাবিক যে, যখন কোথাও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, তখন মানুষের প্রবণতাই থাকবে সেই প্রতিবন্ধকতা কীভাবে ডিঙানো যায়। এটা খুব স্বাভাবিক যে, প্রযুক্তির দুয়ারে কোনো তালা দেওয়া হলে সে তালা যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ খুলে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ভিপিএন তো এমন না যে এক-দুজন মানুষ ব্যবহার করে। সারা দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ এটা ব্যবহার করে। অতএব সেটার প্রভাব বাংলাদেশে আগেও ছিল, এখনো আছে।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে সরকার কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিধি-নিষেধ আরোপ করায় দেশে এখন ভিপিএনের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভিপিএন মেন্টরের গবেষক দল জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ভিপিএনের চাহিদা বিস্ময়করভাবে পাঁচ হাজার ১৬ শতাংশ বেড়েছে। ২২ জুলাই থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়ে তিন দিন পর ২৫ জুলাই তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভিপিএন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে অনেকেই বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করছেন। আমরা অনুরোধ করব তারা যেন ভিপিএন ব্যবহার না করেন। কারণ ভিপিএনের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও তথ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের ভিপিএন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।