অনলাইন ডেস্কঃ
ব্রিকস জোটের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে এই জোটের নেতারা নতুন ছয়টি সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। ব্রিকস জোট ব্রাজিল, রাশিয়া,ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির সমন্বয়ে গঠিত। এই জোট নিজেদের আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিকল্প বলে মনে করে।জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনে, এরআয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ঘোষণা করেন যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিকস আর্জেন্টিনা,ইথিওপিয়া,মিশর, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্লকের নেতারা সকলেই এই সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং চীন এই পদক্ষেপকে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া রাশিয়ার কারণেই মূলত এই সম্প্রসারণ ঘটেছে।
যদিও সমালোচকরা এখন পর্যন্ত ব্লকের সাফল্য নিয়ে বিভক্ত, কেউকেউ বলছেন যে এটি প্রধানত প্রতীকী। এই জোটভুক্ত দেশের জনসংখ্যা ইতোমধ্যে সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় এক চতুর্থাংশ – এবং নতুন সদস্যদের সংযুক্তিতে অ বশ্যই জনসংখ্যা ও জিডিপি এই দুইই বাড়বে।
প্রিটোরিয়ার ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক প্রিয়ালসিং বলেন, তিনটি গণতন্ত্র ও দুটি স্বৈরতন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত বর্তমান অভিন্ন গোষ্ঠীর মতো নতুন সদস্যরাও স্বাভাবিক মিত্র নয়।
তিনি বলেন, “আমার প্রথম ধারণা হয়েছে এটা বেশ অদ্ভুত। যে দেশগুলোকে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে সেটাও অদ্ভুত। “আপনারা জানেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে এটা বেশীর ভাগ সংযুক্ত ফলে বিশ্বে ব্রিকস জোটের সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপর অনেক প্রভাব ফেলবে।
সিং বলেন, ব্লকের বর্তমান দুই সদস্য চীন ও ভারত যারা সীমান্ত বিরোধে জড়িত তাদের মতো নতুন যেসব দেশে এই জোটে যুক্ত হবে তাদের বেশ কয়েকটির মধ্যেও উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইথিওপিয়া ও মিশরের মধ্যে উত্তেজনা আগামী বছরগুলিতে আরও বাড়তে পারে এবং যা ব্রিক্স জোটের সামঞ্জস্যকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। আর তা আমরা ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে ভারত ও চীনের মধ্যে দেখেছি।
ইথিওপিয়া ও মিশরের মধ্যে নীল নদের উপর একটি বিশাল জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
একইভাবে, ইরান ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক ও সামরিক শত্রুতার ইতিহাস রয়েছে এবং তারা বহু বছর ধরে ইয়েমেনের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনের শেষে চূড়ান্ত ঘোষণায় ব্রিক্স নেতারা বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা বলেন এবং ডলারের-আধিপত্য ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে স্থানীয় মুদ্রার আরও বেশি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্রিকস থেকে কেন বাদ গেল ? চীন সাহায্যই করল না!
বাংলাদেশও কী সেটাই করবে কারণ ব্রিকসে স্মুদলি জায়গা করে নিল ৬ টা দেশ। সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়া কিন্তু বাংলাদেশের নাম শোনা গেল না সেখানে। সৌদি আরব কী তাহলে চীনের কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে? ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে মারাত্মক আশা করেছিল ঢাকা। তাহলে এমন কি ঘটে গেল? বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তিতে চীনের পুরোপুরি সমর্থন থাকবে। বরং এখানে দিল্লিকে নিয়ে এবার যে প্রেডিকশন করা যায়নি নরেন্দ্র মোদী সেটাই করেছেন। ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে স্পষ্ট নরেন্দ্র মোদী বলে দিলেন সদস্য দেশগুলির সম্মতি নিয়ে ব্রিকসের সম্প্রসারণকে স্বাগত জানাচ্ছে ভারত। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে এর মানে ব্রিকস আড়েবহরে বাড়ল আর তাতে কোনও আপত্তি করল না দিল্লি।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কিন্তু অনেকেই হতবাক। কারণ ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে ভারত বাধা না দিলেও বেশ কিছু শর্ত রেখেই আসছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে এখানে একটু থামতে হবে দিল্লি বাধা দেয়নি ঠিকই কিন্তু দিল্লি বেশ সতর্ক। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোত্রা জানিয়েছেন নতুন এই জোট যেন কোনওমতেই মার্কিন বিরোধী চিন-রাশিয়াপন্থী হিসাবে চিহ্নিত না হয়ে যায় সেদিকেও কড়া নজর রাখবে দিল্লি। বাংলাদেশকে ব্রিকসে ঢোকানোর জন্য চীন কী এক্সট্রা এফোর্ট দিল না? ঢাকার কি এবার সময় এসেছে নতুন করে চীননীতি নিয়ে ভাবার? সর্বশেষ নতুন সদস্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত না হওয়া নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ। কিন্তু কী কারণে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হল না তার এখনও পর্যন্ত কোনও এক্সঅ্যাক্ট কারণ জানা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি দ্বিতীয়ধাপে ব্রিকসের সম্প্রসারণ হবে। আর সেখানেই কী তাহলে থাকতে চলেছে বাংলাদেশের নাম? এটা জানতে হলে ধৈর্য তো ধরতেই হবে৷
https://fb.watch/mEchu1XzJI/