- ব্যাংক খাতের জন্য ১০ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
- বাংলাদেশ ব্যাংক চায় সব প্রতিষ্ঠান চালু থাক। প্রতিষ্ঠানের হিসাব স্থগিত করা হয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। গভর্নর করা হয় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে।
বিগত এক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। তবে ব্যাংকিং কমিশন গঠিত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সরকার ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বদলে টাস্কফোর্স গঠনের পথে হাঁটছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হলো, কমিশন গঠন করলে সংস্কার অনেক সময়সাপেক্ষ হবে। আবার কমিশনের কোনো ক্ষমতাও থাকে না। তার বদলে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আহসান এইচ মনসুর আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। একটি কাজ করবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে। আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ১০টি ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে। তবে পরে সব ব্যাংক নিয়েই নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা হবে। এটা ধাপে ধাপে করা হবে। দ্বিতীয় টাস্কফোর্সটি হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে। ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও যথাযথ তদারকি করতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন সেটি করতে পারে, সে জন্য টাস্কফোর্স কাজ করবে। দেশি-বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে ব্যাংকের ‘ফরেনসিক অডিট’ করা হবে।
দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিদিন সভা হচ্ছে জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, প্রতিদিন তাদের তদারকির ওপর রাখা হয়েছে। এসব ব্যাংক যেন আরও নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়, সেই চেষ্টা চলছে। সব সমস্যা চিহ্নিত হলে প্রয়োজনে ব্যাংক আইনে পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
আমানত প্রসঙ্গ
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা বাড়ানো তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য ব্যাংকের আমানত বিমার আওতা হিসাবপ্রতি দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোথাও আমানতের ওপর শতভাগ বিমা সুবিধা নেই। বাংলাদেশে বিমার ‘প্রিমিয়াম’ (নিশ্চয়তার বিপরীতে বিমা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অর্থ) সবচেয়ে কম। হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিপরীতে মাত্র ৮ পয়সা। ভারতে যা শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ।
আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো সক্ষমতা ১০টি ব্যাংকের নেই উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করা হচ্ছে। বিফল হলে প্রয়োজনে একীভূত করে দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতের বাইরে ৭০ হাজার কোটি টাকা চলে গিয়েছিল জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এ কারণে টাকা তোলার ওপর সীমা আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত এসেছে। টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা আশা করি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না। অন্য দিকে আবার এটাও ঠিক কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। কিন্তু আমরা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করব। এই ব্যাংকগুলোকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করব এবং আশা করছি সময়ের ব্যবধানে এগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।’ তিনি বলেন, প্রত্যেক খারাপ ঋণকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। নামে–বেনামে কে এটার মালিক, সেগুলো চিহ্নিত করে দেখা হবে। কোন পরিবার থেকে এটা নেওয়া হয়েছে, তাদের কী সম্পদ রয়েছে, তা–ও বের করা হবে। এরপর সেই সম্পদের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবে। ওই প্রক্রিয়া চলবে, এটাই চূড়ান্ত সমাধান।
প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত হয়নি
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ নিয়ে নানা অপপ্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেনি, ব্যক্তির হিসাব স্থগিত করেছে। সেটা এস আলম বা বেক্সিমকো গ্রুপ—কোনোটারই না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই সব প্রতিষ্ঠান চালু থাক। দেশের উৎপাদন-কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হোক, এমন কোনো উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে না।’