মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হলে, আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে, নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য এই পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
দলটির সিনিয়র নেতারা জানান, “মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর, হরতাল-অবরোধের পরিবর্তে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিলের মতো বিকল্প কর্মসূচি নেবে বিএনপি।” তারা আরো জানান যে নভেম্বরে তাদের প্রথম ধাপের আন্দোলন শেষ হবে। তারপর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই, বর্তমান নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এগিয়ে গেলে, নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য নতুন কৌশল নিয়ে, দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। আর, একতরফা নির্বাচন বর্জন করতে জনমত তৈরি করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই আমরা ভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন না হলে, আমরা নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আমাদের কৌশল পরিবর্তন করবো এবং আবার হরতাল বা অবরোধ কার্যকর করবো।”
তিনি বলেন, “গণগ্রেপ্তার এবং দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের কারণে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান উৎসাহ না থাকায়, আমাদের প্রথম দফা আন্দোলন সফল হয়েছে।”
এই বিএনপি নেতা আরো বলেন, “ আমরা এখন বিকল্প কার্যকর কর্মসূচি নিয়ে ভাবছি। কারণ, আমরা মনে করি, মানুষকে স্বস্তি না দিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে গেলে, জনগণ বিরক্ত হতে পারে।”
তিনি জানান যে তাদের সাম্প্রতিক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের চলমান কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। এরপর, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করার পক্ষে মত এসেছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন না করা হলে, আগামী ৩০ নভেম্বর হরতাল বা অবরোধ না দিয়ে, ঢাকায় ইসির কার্যালয় এবং জেলা পর্যায়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অফিস ঘেরাও করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
এই বিএনপি নেতা জানান, তারা অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে; যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করে আসছে; তারাও একই মতামত দিয়েছে। অন্য দলগুলোর নেতারা ইসি, সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অবরোধ বা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিএনপি নেতা। বিরোধী দলগুলোকে তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে না দিলে ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে তারা মত দিয়েছেন; জানান তিনি।
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা শেষ হলে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসনে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ছোট দলের প্রার্থীদের মধ্যে বিবাদ শুরু হবে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের অংশীদার এবং যেসব দল বোঝাপড়া ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নির্বাচনে যোগদান করছে; সে সব দলের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বিবাদ বাড়বে।
বিএনপি নেতারা আরো জানান, যদি এমন পরিস্থিতি আসে, তাহলে বিএনপি রাজনৈতিক লাভের জন্য একটি সময়োপযোগী কৌশল নিয়ে আসবে।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর, গত ২৯ অক্টোবর থেকে ছয় দফায় ১৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ এবং দুই দফায় তিন দিন হরতাল পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অবরোধের ষষ্ঠ ধাপ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৬টায় শেষ হয়েছে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে আবার শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আগামী সপ্তাহব্যাপী অবরোধ চলবে। এর পর জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নতুন ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।” তিনি জানান, তাদের দলের নীতিনির্ধারকরা একতরফা জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আরো জনসমর্থন জোগাড় করতে, সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছেন। “আমরা এখনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করিনি; বলেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, “তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্তমান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। আর, সরকার পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় বিরোধী দলের নেতাদের দমন করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা পূর্ণ ধৈর্য ধরে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই সরকার জনগণের দৃঢ় মনোবল ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের কাছে হার মানতে বাধ্য হবে। জনগণ বিএনপিকে হৃদয় থেকে গ্রহণ করেছে এবং তারা দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়।”
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে; এখনো জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, কেউ নির্বাচনে আগ্রহী নয়। তাই আমাদের আন্দোলন সফল এবং জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ কোনো একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।”
“জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন রাজনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিতে আন্দোলন নিজেই তার পরবর্তী পথ নির্ধারণ করবে;” উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।