ঢাকাঃ আজ ১ সেপ্টেম্বর। বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দলটি। এরই মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। দলের ওপর দেশী-বিদেশী চক্রান্ত, অব্যাহত চাপ, শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপর অবর্ণনীয় হামলা, মামলা, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতন বেড়েছে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে ইতোমধ্যে সুসংগঠিত ও আন্দোলনমুখী করেছে হাইকমান্ড। ঢাকায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় শোডাউন দেখিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। ডাক দিয়েছে সরকার পতনের এক দফা দাবি। এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যুগপৎ আন্দোলন করছে সরকার বিরোধী আরো ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোট।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে রক্ষার জন্য বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসন সবকিছুই সরকারী কব্জার মধ্যে। বিরোধী দল দমন করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
৪ বার ক্ষমতায় ও দুইবার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছে। তবে সংগঠনের বিস্তৃতি থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। সরকারের দমন-পীড়নে নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলার হিড়িক ও গ্রেফতার, নিখোঁজ বা গুম ঘটনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালে জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো দল) গঠন করেন। ওই দলের আহবায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে জিয়াউর রহমান ওই বছরে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম-কর্নেল আকরর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এসএ বারী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যাস্টিার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন, কর্নেল (অব.) আসম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমূখ নেতা ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়।
তিন বছরেরও কম সময় পরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এসময় গৃহবধূ ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তখন থেকে প্রায় ৯ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রীতে পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি হন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এরপর আরও দুইবার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামল থেকে একটানা প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও ভূমিধ্বস পরাজয় হয়। এরপর থেকেই দলপুনর্গঠনের কাজে হাত দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন জেলা কমিটির সাথে সাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও আনছেন নতুন নেতৃত্ব।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির কর্মসূচি: বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে বেলা ৩ টায় বিএনপির উদ্যোগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে ফকিরাপুল মোড়, নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্ত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে শেষ হবে। র্যালিতে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, দলের কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। অনুরুপভাবে সারাদেশের ইউনিটগুলোতে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে। ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে অনুযায়ী আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।