ঢাকাঃ আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনের একটি ঝটিকা আন্দোলনের মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সরকারকে প্রচন্ড চাপ দেওয়া এবং দেশ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপির একাধিক নেতাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত রাতে বিএনপির নেতারা বৈঠক করেছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে। সেই বৈঠকে আন্দোলনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এই আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপি কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। কারণ বিএনপি মনে করছে যে, আন্দোলনের বিশদ তথ্য সরকার জানলে এই আন্দোলন ভেস্তে দেওয়ার জন্য সরকার সব ধরনের তৎপরতা নেবে। তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি কি করতে চাইছে তা তারা ভালোমতোই অবগত।

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হল এরকম;
প্রথমত, ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে এবং সেই মহাসমাবেশের জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে লোকদেরকে ঢাকায় আনা হবে ২৮ অক্টোবরের বহু আগে থেকেই। অর্থাৎ পূজার ছুটির পর থেকেই নেতাকর্মীদেরকে ঢাকাই আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার একটি আল্টিমেটাম দিবে এবং এই আল্টিমেটাম বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদেরকে ঢাকাতেই অবস্থান করার কথা বলবে এবং এইদিন থেকেই যে সমস্ত নেতাকর্মীরা এখনো ঢাকার বাইরে আছে তাদেরকে পদযাত্রা করে ঢাকায় আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। একইভাবে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখ গুলোতে অবস্থান গ্রহণ করবে বিএনপি এবং সেখানে কর্মসূচি পালন করবে। এই ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিএনপি নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি করবে এবং এই কর্মসূচির সাথে সাথে জেলা পর্যায় নির্বাচন কার্যালয় গুলোতেও তারা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে এবং এর পরপরই তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে। অর্থাৎ ঢাকাকে সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি।
বিএনপির আন্দোলনের তৃতীয় ধাপে থাকবে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও এবং অবস্থান গ্রহণ। সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণের লক্ষ্যে সরকার যেন পদত্যাগ করতে রাজি হয় সে আহ্বান জানাবে। একই সাথে এই সময় তারা প্রতিদিনই ঢাকার রাজপথে অবস্থান গ্রহণ করে, সবকিছু অচল করে দেবে।
চতুর্থ ধাপে বিএনপি জনগণের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের জন্য এবং সরকারের সাথে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানাবে এবং এই অসহযোগিতার মাধ্যমে তারা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে চায় বলে জানিয়েছে। আর পাশাপাশি এই সময় তারা একটি মঞ্চ তৈরি করবে এবং এই মঞ্চের মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত গতি দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই মঞ্চে তারা বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষদেরকে আনবে। বিএনপি আশা করছে সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ এই মঞ্চে এসে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দিবে, সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দেশে অচল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।
বিএনপির নেতারা বলছেন যে, এরপরও যদি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করে তাহলে বিএনপি লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি এবং নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলনকে সহিংস করে তুলবে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন যেন না হতে পারে সেই জন্য বিএনপি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সেই পদক্ষেপ হবে কঠোর এমনটি বলেছেন। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বিএনপি এধরণের পরিকল্পনা বহুবার নিয়েছে। কিন্তু এবার শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন কতটা গড়ে তুলতে পারবে সেটি এবার দেখার বিষয়।