বিএনপির নেতা কর্মীদের দেড় লাখ মামলায় প্রায় ৫০লাখ আসামি

180

সারাদেশে দেড় লাখ মামলায় প্রায় ৫০লাখ আসামি মামলা আর সাজার চাপে বিপাকে বিএনপি নেতা কর্মীরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩৬,বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৫০, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নামে ৯৩ মামলা আর অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১৮০টির বেশি। বিএনপির নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত মামলার দিক দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৫১টি।

ঢাকাঃ বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা নতুন-পুরাতন মামলা আর সাজার চাপে বিপাকে পড়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে গতিসঞ্চার হয়েছে। দ্রুত ফেলা হচ্ছে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ;শেষ হচ্ছে বিচারিক প্রক্রিয়াও। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতার অভিযোগে করা মামলাগুলোও সচলের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে মফস্সলের বেশির ভাগ নেতাই এখন মামলার  চক্রে। এমনও নেতা রয়েছেন যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৫১টি। কোন কোন নেতাকে সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসই কাটাতে হয় আদালতে একটির পর একটি মামলার হাজিরায়।

গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ সেল থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, ২০০৯ থেকে গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত গত ১৪ বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সকল মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জন। বিএনপি কার্যত এখন মামলার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের এমন কোন নেতা নেই যার বিরুদ্ধে ৪০-৫০টা মামলা নেই। বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। কারণ একটাই বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়া, আন্দোলন দমন করা। নির্বাচনের আগে সরকারের উদ্দেশ্য বিএনপিকে মাঠছাড়া করা। তিনি বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলাগুলো আবার সচল করা হচ্ছে। মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। কিন্তু এসব করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। সরকারের নীলনকশাও বাস্তবায়ন করা যাবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা তথ্য ও সংরক্ষণ সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তে জানা যায়, ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে ২টি মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও এখন তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে গুলশানে নিজের বাসভবনে রয়েছেন। একইভাবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৫০টি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৯৩টি। যার কোনটি গাড়ি পোড়ানো, কোনটি ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ময়লার গাড়ি ভাঙচুর/ আগুন ইত্যাদি। এর মধ্যে মির্জা ফখরুল ও দলের আরেক নেতা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আট নেতার বিরুদ্ধে গত রবিবার ময়লার গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলার বিচার শুরু হয়েছে। অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১৮০টির বেশি। বিএনপির নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত মামলার দিক দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৫১টি। যার সবকটিই মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, যেখানেই মনে হয়েছে সেখানেই নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে আসামি হিসেবে। মামলার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন- জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ৩২৪টি, তৃতীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ৩০০টির বেশি, যুবদলের সাবেক নেতা কারাবন্দি এসএম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২৭৭টি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি মামলা।

এছাড়া দলের ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ১৩৫টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩৪টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ৪৮ টি, ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন ৭ টি, জমির উদ্দিন সরকার ৪ টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ১৯ টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩৬টি, ড. আবদুল মঈন খানের ১টি, নজরুল ইসলাম খানের ৬টি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৬টি, ভারতে অবস্থানরত মো. সালাহ উদ্দিন আহম্মেদের ৩৫টি, বেগম সেলিমা রহমানের ৪টি ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে- মিজানুর রহমান মিনুর ৪৬টি, জয়নাল আবেদীন ফারুকের ৩৫টি, প্রফেসর জয়নাল আবেদনী (ভিপি) ১৪টি, মনিরুল হক চৌধুরীর ৮ট, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ২৯টি, হাবিবুর রহমান হাবিবের ২৫টি মামলা। ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ৬টি, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের ৭টি, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম ৬টি, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ১১টি,কারাবন্দী আবদুস সালাম পিন্টুর ১৯টি,আবদুল আউয়াল মিন্টুর ৮টি,মীর নাসির ১২ টি,কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়ককোবাদ ১৫ টি,ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ১৭টি, শামসুজ্জামান দুদুর ১৪টি,এডভোকেট আহমদ আযম খানের ৬টি, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন ১৮টি, এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ৯টি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১১৯টি, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের ১৭টি, এডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার ১৪টি,খায়রুল কবির খোকনের ৪৭টি, হারুন অর রশিদের ১৪টি, ফজলুল হক মিলনের ১৭টি, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে ১৪টি, মাহবুবের রহমান শামীমের বিরুদ্ধে ৯টি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ৬৯টি, অব্যহতি প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ১৯টি, আসাদুল হাবিব দুলুর ১৯টি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের ১০ট, বিলকিস জাহান শিরিনের ১৭টি, শামা ওবায়েদের ৫টি, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বিরুদ্ধে ৪টি, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ৬৯টি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের ১১টি, নাসির উদ্দিন অসীম ৬ টি, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ১০টি, আহমেদ আলী মুকিব ৭ টি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের ১৭টি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৫টি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বিএনপির বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলর ১৬টি, কারাবন্দী প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ৩৮টি, শিশু সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর ৬টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমজাদ হোসেনের ৪টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসাইনের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, যখনই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন শুরু হয় তখনই শুরু হয় একের পর এক মামলা দেওয়া। বিশেষ করে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিলে তার আগে মামলা ও আটকের সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ে। মামলা এবং গ্রেফতারের কারণে অনেক নেতা-কর্মী বাসা বাড়ি ছাড়া।

পূর্বের খবরএবার ৫ বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স চালু দক্ষিণ সিটি
পরবর্তি খবরবিএনপি নির্বাচনে আসুক আওয়ামীলীগ কি চায়?