ঢাকাঃ বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনার জন্য বিদেশি কয়েকটি দূতাবাস মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছে। দফায় দফায় তারা নিজেদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি যেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেজন্য শেষ মুহূর্তের তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও যেন বিএনপি নির্বাচনে আসা সুযোগ পায় সেজন্য প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সাথে তারা কথা বলবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
গত দুই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মনে করে বাংলাদেশে যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয় তাহলে সেই জন্য বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু বিএনপি বলছে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না। এরকম অবস্থায় বিএনপিকে ছাড়া একটি নির্বাচনের পথে হাঁটছে দেশ। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটাই চায় না। বরং তারা মনে করে যে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে পরে আবার একটি একতরফা নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেখানে আন্তর্জাতিক মহল কোন কিছুই করতে পারবে না। আর এই কারণেই বিএনপিকে বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বিএনপির বক্তব্য অবশ্য তাদেরকে একটা স্পেস দিতে হবে। বিএনপি আগের চেয়ে অবস্থান অনেক নমনীয় করেছে এমনটাও জানা যাচ্ছে। তবে বিএনপি আগে স্বপ্রণোদিত হয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করবে নাকি আগে তাদের নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হবে— এরকম বিষয়গুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার সমাধান হয়নি।
বিভিন্ন বলছেন যে, বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে এই জন্য কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারাও আবার লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি। বরং তিনি বলছেন যে এটি একটি ফাঁদ। এর মধ্য দিয়ে সরকার আরেকটি ২০১৮ এর মতো নির্বাচন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করবে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপিকে আশ্বস্ত করছে এবার নির্বাচন কঠোর মনিটরিং এবং নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। কোন অবস্থাতেই যেন নির্বাচনে কারচুপি না হয় সেটি দেখভাল করবে পশ্চিমা দেশগুলো। আর তারপরও যদি কোন কারচুপি হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হবে না। সবগুলো দেশ এককাট্টা হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের কথা এখন পর্যন্ত বিএনপি আস্থা রাখতে পারছে না।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক নমনীয়। তারা নির্বাচনে যাওয়ার আগে তাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া এবং জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচন করা— এরকম কিছু কথা বলছে। এই নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিএনপি আগে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিতে হবে। আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হবে। তারপর অন্যান্য বিষয়গুলো দেখা যাবে। বিএনপি যদি আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার না করে নির্বাচনে আসার ঘোষণা না দেয়, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছুই করবে না। একমাত্র বিএনপির নির্বাচনে আসার ঘোষণার পরই বিএনপির দাবি দাওয়াগুলো বিবেচনা করা হবে বা অন্যান্য বিষয়গুলো দেখা হবে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কেউ রাজনৈতিক কারণে আটক হননি। বরং তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা এবং একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে যে ২৮ টি মামলা হয়েছে সেই মামলায় যারা সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযুক্ত তাদের ব্যাপারে সরকার কোন ছাড় দেবে না। এরকম একটি অবস্থায় শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা হয় কি না নাকি নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সমঝোতা হয় সেটি দেখার বিষয়।