ঢাকায় পৌঁছেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। আজ রোববার রাতে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।রাত ৮টা ১০ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন এবং ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়।এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন।
ঢাকাঃ বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লি হয়ে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। গত ৩৩ বছরের মধ্যে এটাই হবে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রথম ঢাকা সফর। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লি সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সেখান থেকে দ্বিপাক্ষিক সফরে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সম্মানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ সকল অতিথিবৃন্দ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
গতকাল রাতে হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজন করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে অংশ নেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। পরে ‘জলের গান’ ব্যান্ডের শিল্পী রাহুল আনন্দের স্টুডিও পরিদর্শন করেন তিনি। আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডি লেক পরিদর্শন করে ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার কথা রয়েছে তার। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বিকেলে ঢাকা ছাড়বেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
জানা গেছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু, নারীর ক্ষমতায়ন, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ সফরকালে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। এর বাইরে অস্ত্র, উড়োজাহাজ ক্রয় এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকায় ফরাসি দূতাবাস তাদের ফেসবুক পাতায় বলেছে প্রেসিডেন্টের এ সফরে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কদিন আগে বলেছিলেন, ফ্রান্সের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে আরও দুটো চুক্তি করার পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, তারা কিছু এয়ারবাস বিক্রি করতে চায়। আমরা কিনবো। এর মধ্যে দুটো কারগো বিমান। বাকিগুলো বোয়িং ও এয়ারবাস থেকে। ফ্রান্স বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা করতে চায় বলেও জানান মোমেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফর কয়েকটি কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রাস বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে। দেশটি মিলিটারি হার্ডওয়্যার শিল্পেও বেশ প্রভাবশালী। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরকে ঘিরে ফ্রান্সের আলাদা কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে এবং এ অঞ্চলে দেশটির সামরিক উপস্থিতিও আছে। দেশটি এখন চাইছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে। ঢাকার কয়েকজন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে এ সফরে। এটি হবে একটি আর্থ অবজারভেটরি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে।