ফেরদৌস হাসানের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস “ডাক দিয়ে যায়” বইমেলায় এসেছে

147

ঢাকাঃ এবারের একুশের বইমেলায় দেশের আলোচিত ঔপন্যাসিক ফেরদৌস হাসান রানার মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস “ডাক দিয়ে যায়” এসেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গনে “ডাক দিয়ে যায়” বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ফেরদৌস হাসান রানা রচিত উপন্যাস “ডাক দিয়ে যায়” বইয়ের প্রকাশক মোঃ হাবিবুর রহমানের জিনিয়াস পাবলিকেশন থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ একেছেন ধ্রব এষ। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন লেখক পত্নী জিনিয়া রুনা।

ফেরদৌস হাসান রানার উপন্যাস “ডাক দিয়ে যায়” নিয়ে দেশের প্রখ্যাত কবি হাসনাত আবদুল হাই তার ফেসবুক দেওয়ালে যা লিখছেন,

হাসনাত আবদুল হাই স্যারের আর্শীবাদ…

মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস হাসান এক বিস্ময়।তিন যুগের বেশি সময়কালে তিনি লিখে চলেছেন গীতিকবিতা, উপন্যাস,নাটক ও চিত্রনাট্য।তার প্রতিটি উপন্যাস জীবনঘনিষ্ট এবং ভাষায় ও আঙ্গিকে আধুনিক।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লিখেছেন এই উপন্যাস যা বইমেলায় এনেছে জিনিয়াস পাব্লিকেশন্স।অনেক চিন্তা আর পরিকল্পনার ফসল এই বই যে মনে রাখবার মত হবে,তা কয়েক পাতা পড়েই বোঝা যাচ্ছে।এই পর্যন্ত তার যে ক’টা উপন্যাস পড়েছি, মুগ্ধ হয়েছি। সময় নিয়ে এই বই পড়বো।

No description available.

ফেরদৌস হাসান রানার উপন্যাস “ডাক দিয়ে যায়” বইনিয়ে জামিল রায়হান তার ফেসবুক দেওয়ালে লিখছেন,

May be an image of ২ people and text

No description available.

Ferdous Hasan was tagged.
 
“ডাক দিয়ে যায়” : বুকে মোচড় দেয়া এক অসাধারণ জীবনালেখ্য
———————————–🎋
খুব কষ্ট করে বইমেলায় গিয়েছিলাম, ফেরার বিড়ম্বনা আরও বেশি।তবু কিছু ভালো মানুষের সহমর্মিতা বুকে ঢেউ তোলে।কষ্টগুলো আনন্দে দোল খায়।
টিএসসির গেটে নেমে অল্প এত্তোটুক রাস্তায় দুবার বসে একেবারে নিকটতম তিন নম্বর প্যাভিলিয়ন ” জিনিয়াস”- এ গিয়ে অখন্ড প্রশান্তি।পথিমধ্যে পুলিশের পাশে বসে জিরিয়ে নেবার সময়, একজন পুলিশ ভাইয়ের খেদোক্তি খুব মনে ধরলো।
— মেলায় যতো মানুষ যাচ্ছে,একখান করে বই কিনলে আজ সব বই উজাড় হয়ে যেতো।
তাকিয়ে দেখি, অগুনতি মানুষ।পায়ে পায়ে ধুলো ছড়িয়ে ছুটছে বইমেলায়।কেন এতো মানুষের ভিড়! বই কেনার জন্য নাকি প্রমোদ বিহার?
জিনিয়াসে বসেই লক্ষ্য করলাম,কলেজ ভার্সিটির
রোমিওরা প্যাভিলিয়নের বই হাতে নিয়ে ছবি তুলছে,আনন্দে অবগাহন করছে,কিন্তু একখানা বইও কিনছে না।বাচ্চাদের আবদারে মা বাবা দুএকখানা বই কিনে দিচ্ছেন।ধার্মিক স্ত্রীর আবদারে স্বামী কিনে দিচ্ছেন ধর্মীয় পুস্তক।শিল্পের বেশ উঁচু স্তরের কবিতার বইয়ের উপর বিস্তর ধুলোর আস্তর।কালেভদ্রে দুএকজনকে দেখলাম গল্প উপন্যাস কিংবা জীবনীগ্রন্থ কিনছেন।দাম দরও করছেন, চলমান ২৫% থেকে আরও একটু বেশি কমিশন।কে যেন বললেন,”আমি লেখক আমার জন্য কমিশন কতো? “
নিরুত্তাপ বিক্রয়কর্মী, পঁচিশই।
আমার প্রিয় অনুজ,বন্ধু ফেরদৌস হাসানের বই আসবে আজ,সেজন্য
আকুল অপেক্ষা।তাঁর নতুন উপন্যাস ” ডাক দিয়ে যায়” এলো সন্ধ্যার আলোছায়া মেখে।জমজমাট মেলায় তখন
কথাশিল্পীর বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব,সহৃদয় পাঠকের সরব উপস্থিতি। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কিছু কথা,কিছু আবেগ, রসসিক্ত মিষ্টিমুখ, কিছু গল্প আড্ডা এবং গৃহে ফেরা।
দুই.
রাতেই বইটির পাতা খুললাম।খুব ছোট ছোট বাক্যে, ছোট ছোট গল্প কথার বাক বিন্যাস।কে যেন বলেছিল,এটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস।প্রায় সব লেখাতেই লেখক থাকেন সরবে বা নীরবে।এখানে কি “রাজ” নামের আড়ালে ফেরদৌস হাসান ঘুরে ফিরছেন আমাদের উপলব্ধি আর অনুভবের সারাটা প্রান্তর জুড়ে।ডাক দিয়ে যায় পড়তে পড়তে মাঝে মাঝেই যেন শিউরে উঠি। শিশু,বালক ও কিশোর রাজের ভেতরে কিভাবে পরিবার সমাজ দেশ ও আস্ত পৃথিবী ক্রমশ শেকড় বিস্তার করছে
তার নিপুণ কাহিনীর বুনন শিল্পের ভেতর দিয়ে।মা বাবা ভাইবোনের সাথে পারিবারিক সম্পর্কের নিবিড়
অনুভব, পাশাপাশি পাড়াপড়শি বন্ধুবান্ধব, বেড়ে ওঠা নিকট বাস্তবের নানান বয়সী বিচিত্র মানুষের সাথে মিথষ্ক্রিয়া ভারি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে গ্রন্থের পরতে পরতে। আলাভোলা এক কিশোর ধীরে ধীরে মৃত্তিকা সংলগ্ন হচ্ছে এবং নিজেকে মেলে ধরছে সমাজ ও সময়ের উত্তাল পালাবদলের বাঁকে বাঁকে।রাজনীতি দেশ তার মননে খুব সন্তর্পণে পুঁতে দিচ্ছে নিবিড় চেতনার বীজমন্ত্র।ঘরকুনো কিশোর রাজ হয়ে উঠছে চলমান সময়ের একজন তুখোড় ঘোড় সওয়ার।ভেতরে ভেতরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা প্রবল দেশপ্রেম এক পর্যায়ে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তরিত করে।
তিন.
বাবা পুলিশ অফিসার।বাবার সহকর্মী, উর্ধতন অধস্তন নানা শ্রেণী পেশার মানুষের চরিত্রের নানা দিক কিশোর রাজের কোমল মনে ছায়াবিস্তার করেছে।কাছের আত্মীয়স্বজনের বিচিত্র কর্মকান্ড খুব নিবিড়ভাবে তার চিত্তকে প্রভাবিত করেছে।ঊনসত্তরের গণ আন্দোলন, বাঙালির আবেগমথিত জীবনাচরণ তার চিত্তে শক্ত ছাপ ফেলে গেছে,সাতই মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বাঁকে শত্রুমিত্রের কোমল ও নিষ্ঠুর আচরণ কিশোরের অনুভবকে শাণিত করেছে।তার ভেতর দিয়ে একটা কালপ্রবাহ যেন কী নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে।ইতিহাসের ছোট ছোট ঘটনাবলী সুনির্মিতির ভেতর দিয়ে উপন্যাসের
প্রতিটি ভাঁজে তার অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে।
চার.
কতো মানুষ,কতো চরিত্র এর ভেতরে বিছিয়েছে জীবনের দৃশ্যপট।সামাজিক ও পারিবারিক কতো আত্মীয় স্বজন।মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার।সহযোদ্ধা।সাধারণ মানুষ।রাজনীতিবিদ।এন এস এফ।ছাত্রলীগ।জর্দার বিহারি দোকানদার। একেক চরিত্র এ সমাজের এক এক অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে।
আর রাজনীতির প্রাণপুরুষ মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি বঙ্গবন্ধু থেকে আফ্রিকার নেতা নেলশন ম্যান্ডেলা
উপন্যাসের কাহিনীতে সগৌরবে অধিষ্ঠিত।
চরিত্র চিত্রণে ফেরদৌস হাসান খুবই সচেতন, আন্তরিক ও মনোযোগী। কোথাও কোনো কৃত্রিমতা নেই।আমাদের চারপাশের মানুষের সুক্ষ্ম বোধ বিশ্বাসগুলো এখানে প্রাণ পেয়েছে অবলীলায়। কাহিনী ও ঘটনার প্রেক্ষিতে চরিত্রগুলো আপন ভাষায় কথা বলেছে।পড়ে মনে হয়েছে পাঠকের সাথে সাথেই তারা যেন উঠছে বসছে কথা বলছে।মনে হচ্ছে এসবই যেন সময়ের গল্প,কালের ইতিহাস।
পাঁচ.
এতো বিশাল ক্যানভাসের মুক্তিযুদ্ধ,তার সুবিস্তৃত প্রেক্ষাপট কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রাজকে তার পরবর্তী কর্মজীবনে মুক্তিকামী মানুষের কাতারে দাঁড় করিয়েছে।তিনি যেন ফিলিস্তিনেরও একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।যেখান থেকে শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনের গাজায়
যাবার স্বপ্ন,ঘুম ভেঙে গিয়ে শুরু হয়েছিল জীবনের এক একটি অধ্যায়,শেষে এসে স্বপ্নের বীজ গেঁথে দেয় আবারো সেই ফিলিস্তিনি যুবকের বুকে,যে তাকে একটি স্টিকার উপহার দিয়েছিল,যাতে লেখা ছিল: হামাস একটি বিশ্বাস।তারই সুযোগ্য প্রতিদান এভাবেই রাজ ফিরিয়ে দিয়েছে উপন্যাসের শেষে:
“রাজ তোমার হাতের ওটা দেখাও তো!
আপনি কে?
আমি ফিলিস্তিনি যোদ্ধা।
রাজ আসে।তাঁর কাছে।স্যালুট করে।বুকে ওটা লাগিয়ে দেয়।
তখন দেখতে পায়।
ওটা বাংলাদেশের পতাকা।
সবুজের বুকে লাল।
যেন তাঁর বুকের রক্ত!”
ফেরদৌস হাসান,রাজ নামের চরিত্রটিকে “ডাক দিয়ে যায়”–এর সুবিস্তৃত ক্যানভাসে এমনভাবে মেলে ধরেছেন যেন আজন্ম তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের একজন সুযোগ্য প্রতিনিধি।

 

ফেরদৌস হাসান রানা যিনি একাধারে একজন কবি,নাট্যকার,গীতিকার, ঔপন্যাসিক,চলচ্চিত্রকার। তার পরিচালিত প্রায় হাজারের ওপর নাটক বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, তার লেখা গল্প ও চিত্রনাট্যে শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিচালকের মাধমে।
পূর্বের খবরভারতের দিল্লিতে ‘৬০০ বছরের আখুন্দজি মসজিদ’ ভেঙ্গে দিল সরকার
পরবর্তি খবরটাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য ঘোষণা: ভারতের আদালতে দ্রুত মামলা করা উচিত বাংলাদেশের : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য