কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে দিনভর গণনা শেষে মিলল রেকর্ড ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

124

অবশেষে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া ২৩ বস্তা টাকা গণনা শেষ হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টায় অর্থাৎ ১৩ ঘণ্টা গণনা শেষে মোট টাকা মিলেছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এটা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আটটি সিন্দুক খোলা হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে গণনা শেষ করে রূপালী ব্যাংকের ভল্টে পাঠানো হয় তিন কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বড় বড় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট গণনা করা হয়েছে। এর পর অপেক্ষাকৃত ছোট নোট গণনা করা হয়।

পাগলা মসজিদের ৮টি সিন্দুক খুলে মিলেছে রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। আজ সকালে

প্রায় ২৫০ মানুষ দিনভর গুনছেন, তবু শেষ হয়নি পাগলা মসজিদের সিন্দুকের টাকা গণনা

জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে আটটি লোহার দানসিন্দুক আছে। তিন থেকে পাঁচ মাস পরপর এই সিন্দুক খোলা হয়। এবার প্রায় সাড়ে তিন মাসের মাথায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে মসজিদের আটটি দানসিন্দুক খোলা হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া, মসজিদ কমিটির সদস্য আনোয়ার কামালসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। আজ সকালে
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। আজ সকালেছবি: প্রথম আলো

প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। এরপর শুরু হয়েছে গণনার কাজ। মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক টাকা গণনা করেন।

পাগলা মসজিদের সিন্দুকের টাকা গোনা চলছে, ৪ ঘণ্টায় পাওয়া গেল ৩ কোটি টাকা

এর আগে গত ৬ মে আটটি দান সিন্দুকে ১৯ বস্তা টাকা দিনভর গুনে পাওয়া গিয়েছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া গিয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। ওই সময় রোজার মাস ও ঈদের জন্য দেরি করে পাঁচ মাস পর দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তাই এবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় একটু আগেভাগেই খোলা হয়েছে। এরপরও পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা। টাকা ছাড়াও ঐতিহাসিক এ মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত স্টাফ এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক টাকা গণনা করেন
মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত স্টাফ এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক টাকা গণনা করেনছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারী আলাদাভাবে নামাজ পড়তে পারবেন। ইতিমধ্যে এর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে। সেটির পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশলীদের। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।

টাকা ছাড়াও ঐতিহাসিক এ মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

জেলা প্রশাসক বলেন, তাঁদের কাছে বর্তমানে প্রায় অর্ধেকের কিছু বেশি টাকা রয়েছে। তবে কাজ শুরু করলে বাকি টাকারও ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরও জানান, এ ছাড়া পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদছবি: প্রথম আলো

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।

পূর্বের খবরসরকার- বিরোধী দলের রাজনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে
পরবর্তি খবরবঙ্গবন্ধুর পথে নেই আওয়ামী লীগ, পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ: অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন