ঢাকাঃ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী ﷺ বিষয়ে ৩ পর্বের দালিলিক আলোচনা ও বিরুদ্ধবাদিদের বিরোধীতার পোস্টমর্টেম। আমরা আমাদের সম্পূর্ণ আলোচনাটা তিনটি পয়েন্টে ভাগ করেছি পাঠকদের সহজেই বুঝার জন্য।আর সেই তিনটি পয়েন্ট হলো-
পর্ব-১
১/দয়াল নাবীজী (ﷺ) এঁর আগমনের দিন কে উপলক্ষ করে মাহফিল করা, খুশি উদযাপন করা, একত্রিত হওয়া,তাবারুক বিতরণ করার বৈধতা কুরআন হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
২/জবাব তাদের কথার উপর যারা বলে, দয়াল নাবীজী (ﷺ) এঁর আগমনের দিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপন করা বিদয়াত বা নব্যসৃষ্টি।এবং জবাব তাদের জন্যও যারা এই দিনে ঈদ উদযাপন বা অনুষ্ঠান করাকে ঘৃনা করে।
৩/দয়াল নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিনে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কতিপয় ওলামায়ে কেরামদের অভিমত এবং তাদের কিতাব সমূহ।
নিশ্চয়ই দয়াল নাবীজী(ﷺ) এর আগমন দিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের বৈঠক নেক কাজসমূহ থেকে একটি নেক কাজ। যেটার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। এবং ঈমানের মূল।
নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে এই ৩টি পয়েন্ট এবং পয়েন্টের দলীল উপস্থাপন করবো, ইনশাআল্লাহু তাআলা,আজ রয়েছে প্রথম পয়েন্টেরর আলোচনা …
النقطة الأولى(প্রথম পয়েন্ট)
(إثبات جواز الاحتفال بالمولد النبوي الشريف من الكتاب والسنة)
অর্থাৎ দয়াল নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করার বৈধতা পবিত্র ক্বুরআন সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত
الدليل الأول(প্রথম দলীল)
(تعظيم أيام وأماكن ولادة بعض الأنبياء في الكتاب والسنة)
অর্থাৎ :(পবিত্র ক্বুরআন সুন্নাহর আলোকে কতিপয় আম্বিয়া আলাইহিস সালাম গনের জন্মের দিন এবং স্হান সমূহের মর্যাদা।)
জুমআর দিনের মর্যাদা :
কেননা এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
والحديث في (صحيح مسلم) عن أَبي هريرةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قال: «خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ، يَوْمُ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وفيه أُدْخِلَ الْجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا، ولَا تَقُومُ السَّاعَةُ إِلَّا فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ».
অর্থাৎ সহীহ্ মুসলিম শরীফে রয়েছে :হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবীজী (ﷺ) বলেন -উত্তম দিন (যে দিন সূর্য উদিত হয়েছে) জুমআর দিন। কেননা এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তিঁনাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এই দিনেই তিঁনাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে , এই দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে”)।
##লক্ষ্য করুন
যদি জুমআর দিন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করার কারনে এই দিনের এতো মর্যাদা হয়! তাহলে অবশ্যই দয়াল নাবীজী (ﷺ) এঁর আগমন দিন তিঁনার আগমনের কারনে অধিক মর্যাদাবান অধিক সম্মানিত হবে…এতে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথানা!
আর ঐ যুগ /সময়, হযরত আদম (আঃ) এর আগমনের কারনে যদি এতো সম্মানিত হয়।
তাহলে কেমন অবস্থা হবে ঐ যুগ বা সময়ের, যে যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সাইয়্যেদুনা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আবির্ভূত হয়েছেন???
______________
“বাইতে লাহাম” নামক স্হানের মর্যাদা:
যে স্হানে হযরত ঈসা ইবনু মারইয়াম( আঃ) ভূমিষ্ঠ হয়েছেন।
و الحديث في (سنن النسائ): عن شداد بن أوس:” أن جبريل عليه السلام أمر النبي (ﷺ)بصلاة ركعتين ببيت لحم، ثم قال له “أتدري أين صليت؟ قلت: الله أعلم، قال صليت ببيت لحم حيث ولد المسيح عيسى بن مريم “
সূনানে নাসায়ীতে রয়েছে : হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :”নিশ্চয়ই জিবরাইল (আঃ) নাবীজী (ﷺ) কে বাইতে লাহম এ দুই রাকাত নামাজ পড়তে বললেন। অতপর তিঁনি নাবীজী (ﷺ) কে বললেন আপনি কি জানেন কোথায় নামাজ পড়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন আল্লাহ্ তাআলাই ভালো জানেন, জিবরাঈল (আঃ) বললেন আপনি বাইতে লাহমে নামাজ পড়েছেন যেখানে হযরত ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে ভূমিষ্ঠ করা হয়েছে।
————–
পবিত্র ক্বুরআনে হযরত আম্বিয়া (আঃ) গনের জন্মদিনের উপর সালাম বা শান্তি প্রদান করা হয়েছে :
كقوله تعالى حكاية عن عيسى عليه السلام: “والسلام علي يوم ولدت “
অর্থাৎ যেমনিভাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলা হযরত ঈসা (আঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করেন :”এবং ঐ সালাম আমার উপর যে দিনে আমি জন্মলাভ করেছি “।
তাহলে নাবীজী (ﷺ) কি তিঁনার আগমন দিনে সালাম দ্বারা অধিক আওলা বা অধিক শ্রেষ্ঠতর হবেন না!!
অতএব প্রথম দলিল থেকে আমরা পাই নির্দিষ্ট দিন, কাল, স্হান সরণ করার বৈধতা। আর দয়াল নাবীজী (দরুদ) এর আগমন দিন সরণ করে মাহফিল উদযাপন করা হচ্ছে সর্বাপেক্ষা উত্তম।
——————
الدليل الثاني(দ্বিতীয় দলীল):
قصة عتق أبي لهب لثويبة الأسلمية فرحا بمولد النبي(ﷺ).
অর্থাৎ :নাবীজী (ﷺ) এর আগমনে খুশি হয়ে আবু লাহাব তার দাসী সুয়াইবা আল আসলামীয়া কে মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনা:
ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর (বিদায়া ওন নিহায়াহ) নামক কিতাবে বলেন :নিশ্চয়ই প্রথমে যিনি নাবীজী (ﷺ) কে দুগ্ধ পান করিয়েছেন তিনি হচ্ছেন সুয়াইবা, আবু লাহাবের দাসী। নাবীজী (ﷺ) এর বিলাদাতের সুসংবাদ পাওয়া মাএই আবু লাহাব তার দাসী সুয়াইবাকে মুক্ত করে দেয়। তার এই কাজের প্রতিদান হিসেবে প্রতি সোমবার তার শাস্তি কে কমিয়ে দেওয়া হয়। সহীহ্ বুখারী শরীফে এসেছে: ولهذا أن العباس بن عبدالمطلب رأى أبا لهب في النوم بعد وفاته فسأله عن حاله فقال: لم ألق خيرا بعدكم غير أني سقيت في هذه بعتاقتي ثويبة وإنه ليخفف علي في كل يوم اثنين أخرجه البخاري (5101) في النكاح والسهيلي في الروض الأنف (5/192) فتح الباري (1/124
অর্থাৎ :এটার কারনেই হযরত আব্বাস ইবনু আব্দুল মাত্তালিব (রাঃ) আবু লাহাবের ওফাতের পর তাকে সপ্নে দেখে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলেন। আবু লাহাব বললো, তোমাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাৎ পাইনি,তবে আমার ভাতিজা (হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর ভূমিষ্ট হওয়ার সংবাদে খুশি হয়ে আমার দাসী সুয়াইবা কে মুক্ত করার কারনে আমাকে পান করানো হয়। এবং অবশ্যই ঐটার কারনে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি কে হালকা করে দেওয়া হয়। ইমাম বুখারী কিতাবুন নিকাহর (৫১০১) নম্বর হাদীসে,এবং সুহাইলী রওদুল আনফের ৫ খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায়,ফাতহুল বারী ১ খন্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
লক্ষ্য করুন :
এটাই যদি সত্য হয়, একটা কাট্টা কাফের যাকে পবিত্র ক্বুরআনে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, নাবীজী (ﷺ) এর আগমনে খুশি হওয়ার কারণে যদি প্রতি সোমবার তার শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে একজন মুমিন একত্ববাদী যখন নাবীজী (ﷺ) এর আগমনে আনন্দ উদযাপন করে তার কি অবস্থা হবে…! এবং সে ঐটার উপরেই মৃত্যু বরণ করে।
————-
الدليل الثالث(তৃতীয় দলীল):
(احتفاله(ﷺ) بمولده بصيامه يوم الإثنين):
অর্থাৎ নাবীজী (ﷺ) সোমবার দিনের রোযার দ্বারা তিঁনার আগমন দিন বা জন্ম দিন পালন করেছেন।
فقد أخرج مسلم في (صحيحه) عن أبي قتادة رضي الله عنه أن رسول الله(ﷺ) سئل عن صوم يوم الإثنين، فقال: “ذاك يوم ولدت فيه، ويوم بعثت فيه “
অর্থাৎ :অতএব অবশ্যই ইমাম মুসলিম (রাঃ) তাঁর সহীহ্ গ্রন্থে হযরত ক্বতাদাহ্ (রাঃ)থেকে উল্লেখ করেছেন,নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) কে সোমবার দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হলো, অতপর তিঁনি (ﷺ) বললেন “ঐ দিনেই আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছি(সোমবার দিন) এবং ঐদিনেই আমার উপর ক্বুরআন প্রেরণ করা হয়েছে। ( সহীহ্ মুসলিম শরীফ দ্বিতীয় খন্ডের 819 পৃষ্ঠার 1162 নম্বর হাদীস)
আর এই উদ্ধৃতিটি নাবীজী(ﷺ) এর আগমন দিন পালন করার উপরই বহন করে। আর হাদীসের ব্যাপকতা থেকে বুঝা যায়, নিশ্চয়ই নাবীজী (ﷺ) তিঁনার আগমন দিনের রোযার ব্যাখ্যা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিকেই ইংগিত করেছেন। যেটা প্রত্যেক বছরের ঐদিন উদযাপন করার একটা দিক। এবং প্রত্যেক সোমবার।
—————
الدليل الرابع(চতুর্থ দলীল):
ما صح عن النبي (ﷺ) في صيام يوم عاشوراء.
অর্থাৎ :আশুরার দিনের রোযার ব্যাপারে নাবীজী(ﷺ) থেকে যা সঠিক হয়েছে.
فعن ابن عباس رضي الله عنهما قال: لما قدم النبي (ﷺ) المدينة وجد اليهود يصومون عاشوراء، فسئلوا عن ذالك، فقالوا هذا اليوم الذي أظفر الله فيه موسى و بني إسرائيل على فرعون، ونحن نصومه تعظيما له، فقال رسول الله (ﷺ): “نحن أولى بموسى منكم “،ثم أمر بصومه.(متفق عليه)
অর্থাৎ :হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিঁনি বলেন:যখন নাবীজী (ﷺ) মাদীনায় গমন করলেন ইহুদিদেরকে আশুরার রোযা রাখা অবস্থায় পাইলেন, অতপর তাদেরকে রোযা রাখার কারন সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হইলো, তারা বললো এই দিনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ও তাআলা হযরত মূসা (আঃ) এবং বনী ইসরাঈল কে ফেরাউন সমপ্রদায়ের উপর বিজয় দিয়েছেন। আর আমরা তার রোযা রাখি(আশুরার রোযা) তাঁর সম্মানার্থে(হযরত মূসা আঃ)। অতপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমরা মূসা (আঃ) এর প্রতি তোমাদের থেকে অধিক হক্বদার। অতপর তিঁনি(ﷺ) আশুরার রোযা রাখার নির্দেশ করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
** আর এই হাদীসটি যুগ বা কালের পর্যবেক্ষণের প্রতিই সুদৃঢ়করণ করে। কেননা নাবীজী (ﷺ) ধর্মের ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সমূহকে যুগ বা কালের সম্পৃক্ততায় তত্ত্বাবধায়ন করতেন।
তাহলে নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিনই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা তত্ত্বাবধায়ন বা পর্যবেক্ষণ!
লক্ষ্য করুন :
নাবীজী (ﷺ) এর আশুরার দিনের রোযা সাইয়্যিদুনা মুসা (আঃ) এর মুক্তি উদযাপনের জন্যই ছিলো।
আর অবশ্যই শরিয়তের এই বড় উপলক্ষ সমূহকে সরণ করা এবং এর দ্বারা খুশি ও অনুষ্ঠান উদযাপন করা জায়েজ।
অতএব নাবীজী(ﷺ)এর আগমন দিনই হচ্ছে এই উপলক্ষ সমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্ব মহান উপলক্ষ।
——————-
الدليل الخامس(পঞ্চম দলীল):
أن النبي(ﷺ)عق عن نفسه بعد النبوة.
নিশ্চয়ই নাবীজী (ﷺ) স্বয়ং আকীকাহ্ করেছেন, নবুওয়াতের পরে।
يقول الإمام السيوطي رضي الله عنه في كتابه “حسن المقصد في عمل المولد “(أصل الاجتماع لصلاة التراويح سنة وقربة …، وكذااك نقول: أصل الاجتماع لإظهار شعائر المولد مندوب وقربة)
ইমাম আস সূয়ুতী (রাঃ) তার( হুসনুল মাকসাদ ফি আমালিল মওলিদ) এ বলেন :” তারাবীহ নামাজের জন্য একত্রিত হওয়ার মূল হচ্ছে সুন্নাত এবং নেক কাজ। অনুরূপ ভাবে আমরা বলবো: জন্মদিনের অনুষ্ঠান সমূহ প্রকাশের জন্য একত্রিত হওয়া হচ্ছে মানদুব এবং নেক কাজ। (হাবীলিল ফতওয়া (১/১৮৪-১৮৫)
ثم قال: وهو ما أخرجه البيهقي عن أنس رضي الله عنهما أن النبي(ﷺ) عق عن نفسه بعد النبوة. (أخرجه البيهقي في “الكبرى”:(٩/٣٠٠)
অতপর তিনি বলেন :সেটা যা ইমাম বাইহাকী হযরত আনাস (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয়ই নাবীজী (ﷺ) স্বয়ং আক্বীকাহ্ করেছেন নবুওয়াতের পরে। (বাইহাকী তার “সুনানুল কুবরা “কিতাবের ৯খন্ডের ৩০০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি উল্লেখ করেছেন)।
এটা সত্ত্বেও যে, নাবীজী(ﷺ) এর দাদা আব্দুল মোত্তালিব তাঁর (ﷺ) এর বিলাদাতের সপ্তম দিনে তাঁর (ﷺ) এর পক্ষ থেকে আকিকাহ্ দিয়েছেন। আর আকিকাহ্ দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি হয় না।
কিন্তু নাবীজী (ﷺ) দ্বিতীয় বারের নিজের আকীকাহ্ একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপরই বহন করবে। ঐটার জন্য আমাদের উপরও মুস্তাহাব একত্রিত ভাবে নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, খাবার পরিবেশ করা, ইত্যাদি নেক কাজসমূহ এবং আনন্দ সমূহ প্রকাশের দিক থেকে। (হাবীলিল ফতওয়ার প্রথম খন্ডের 188 পৃষ্ঠা)
——————-
الدليل السادس(৬ষ্ঠ দলীল):
ذكر الله تعالى لقصص الأنبياء في القرآن. ومنها قصة ولادة يحيى ومريم وعيسى عليهم السلام.
অর্থাৎ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলা পবিত্র ক্বুরআনে অনেক আম্বিয়া (আঃ) ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তার থেকে :যেমন হযরত ইয়াহইয়া, হযরত মারইয়াম, হযরত ঈসা (আঃ) গনের বিলাদাতের বা জন্মের ঘটনা।
وقوله سبحانه وتعالى: “وكلا نقص عليك من أنباء الرسل ما نثبت به فؤادك “(سورة هود: من الآية١٢٠)
অর্থাৎ :আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলা বলেন:”আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি, যা দ্বারা আপনার অন্তর কে মজবুত করেছি”।(সূরা হুদ, আয়াত 120)
**যদি আম্বিয়া (عليهم السلام) গনের বৃত্তান্তসমূহ অন্তরের জন্য সুদৃঢ়করণ হয়, **তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর জন্ম বৃত্তান্ত অন্তর দারা অধিক আওলা এবং অনেক বড় সুদৃঢ়করণ!!
—————–
الدليل السابع(সপ্তম দলীল):
**قوله سبحانه وتعالى عز وجل:(قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون)
অর্থাৎ :”আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলা বলেন :”হে হাবীব (ﷺ) আপনি বলুন, আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ এবং তাঁরই দয়া আর ঐটার দ্বারাই যেন তারা আনন্দিত হয়, সেটা তাদের সমস্ত কিছু থেকে উত্তম। (সূরা ইউনূস আয়াত 57).
আর এখানে “রহমত” দ্বারা উদ্দেশ্য সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)। যেমনিভাবে নিশ্চয়ই সেখানে এই দৃষ্টিকোনের আলোকে তাফসীর কারকগনের থেকে যারা তাফসীর পেশ করেছেন:
(١) ففي “الدر المنثور ” للحافظ السيوطي، (٤/٣٦٧) أخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال: فضل الله العلم، ورحمته النبي(ﷺ) .
قوله سبحانه وتعالى: (وما أرسلناك إلا رحمة العالمين) “الأنبياء: ١٠٧”
(১)অর্থাৎ :ইমাম হাফেজ জালাল উদ্দিন আস সুয়ূতী (রাঃ) এর (দুর্রুল মানসীর) এ রয়েছে, তিঁনি আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন: “ফাদ্বলুল্লাহি” হচ্ছে, ইলম। আর “ও রহমাতুহু” হচ্ছে নাবীজী (ﷺ).(দুর্রুল মানসূর,৪ খন্ডের, ৩৬৭পৃষ্ঠায়)
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওতাআলা বলেন :আমি আপনাকে প্রেরণ করিনি, তবে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া আয়াত -১০৭.
(২)অনুরূপ ভাবে আলূসী তার তাফসীর গ্রন্থ “রুহুল মায়ানীতে” বলেন :আয়াতে বর্ণিত “রহমত ” হচ্ছেন নাবীজী (ﷺ).তিনি বলেন নাবীজী (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য প্রসিদ্ধ হচ্ছে “রহমত” দ্বারা। (রুহুল মায়ানীর ১০ খন্ড,১৪১ পৃষ্ঠা)।
(৩) ইবনুল জাওযী তার তাফসীরের কিতাবের মধ্যে নকল করেন :আয়াতে বর্ণিত “রহমত ” শব্দের অর্থের জন্য আটটি অভিমত রয়েছে, এর মধ্যে তৃতীয় নম্বর অভিমত হচ্ছে, “ফাদলুল্লাহ্ “হচ্ছে ইলম। “ও রহমাতুহু ” হচ্ছে নাবীজী (ﷺ).(জাদু মাসীর ফি ইলমিত তাফসীর,৪ খন্ডের, ৪০ পৃষ্ঠা)
অতএব দয়াল নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিন পালন করা, এই দিনে খুশি উদযাপন করা, সমবেত হওয়া, মাহফিল করা বৈধ। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।
উপরোক্ত প্রথম পয়েন্টের আটটি দলীল এটাই সাব্যস্ত করে এবং দয়াল নাবীজী (ﷺ) এর আগমন দিন পালনে উৎসাহ প্রদান করে।
লেখকঃ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।