অনলাইন ডেস্ক:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভায় নেকাব না খোলায় এক ছাত্রীকে ভাইভায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটে।
এক সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভাইভায় নেকাব পরে অংশ নেন ওই ছাত্রী। এ সময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। তবে তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সব সদস্যের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা।
পরে নেকাব না খোলায় তার ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা। ওই শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সে দিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার ভাইভা নেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারো তার ভাইভা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তবে ওই শিক্ষার্থী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখন পর্যন্ত তার ভাইভা নেয়া হয়নি।
ঘটনাটি এক মাসের আগে ঘটলেও এতদিন দুই পক্ষের মধ্যে একটা যোগাযোগ থাকায় সেটি প্রকাশ পায়নি। তবে ছাত্রীর অনড় অবস্থানের জন্য গতকাল জানাজানি হয়।
ঘটনার দিন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে ভাইভায় নেকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি। তাকে বুঝিয়েছি যে, ‘দেখো আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না।’
যখন সে রাজি হয়নি তখন আমরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দিয়েছি। এর পরে আমরা কয়েক দফায় তার সাথে কথা বলেছি; কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা গতকাল বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম তিনি যে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি।
নারী শিক্ষিকা দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এভাবে করলে তাহলে আমরা মার্ক দেবো না।’
বিভাগটির সভাপতি শিমুল রায় বলেন, এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন; কিন্তু সবসময় তো থাকে না, সে ক্ষেত্রে আমরা কী করব? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম; কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী এ বিষয়ে বলেন, ইসলামে নেকাব পরা ফরজ নয়; কিন্তু যেহেতু চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ সে ক্ষেত্রে নেকাব করা উত্তম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল বলেন, ‘কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেয়া উচিত।
বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মুখ্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিত।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে যদি নেকাব করে তাহলে শিক্ষিকাদের দ্বারা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেয়া যায়।
তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সে ক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেয়া ভালো; কিন্তু তাদের জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি যেহেতু জানি না, সে ক্ষেত্রে তা জেনে এ বিষয়ে কথা বলব।
এ বিষয়ে গতকাল ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এই কাজটি উচিত হয়নি। আমাদের সামনেও অনেকসময় এ রকম শিক্ষার্থীরা থাকে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকের মাধ্যমে তাদের আইডেনটিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।’