জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর তথ্যানুযায়ী, আসছে শিক্ষাবর্ষে (২০২৪ সালে) প্রাথমিক, এবতেদায়ি ও মাধ্যমিক স্তরের ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩৮ লাখ কপি এবং মাধ্যমিক স্তরে ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬ কপি। এ ছাড়া এবতেদায়ির জন্য ছাপানো হচ্ছে ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৫টি বই। এ জন্য সরকারের প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে সরকার সারাদেশে প্রাক প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে
তুলে দেয় বিনামূল্যের পাঠ্যবই। এবারও তাই হবে। যদিও এর
আগে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দিষ্ট তারিখে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই উৎসব করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে।
এনসিটিবি এর মধ্যে সব শ্রেণির সব পাঠ্যবই ছাপানো শেষ করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিন প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে; মাধ্যমিকের হবে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একটি স্কুলে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বছরের প্রথম দিনের উৎসবে কোনো কোনো জায়গায় অষ্টম শ্রেণির দু-একটা বই বাকি থাকতে পারে। ছাপানোর অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় শতভাগ বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বইয়ের ছাপানো পিছিয়ে থাকার কারণ যথাসময়ে এসব বইয়ের পা-ুলিপি দিতে পারিনি। আমি বিশ^াস করি, আমাদের প্রেসগুলোর সক্ষমতা অনেক। দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যথাসময়ে অন্তত জেলা পর্যায়ে বই পৌঁছে যাবে।
নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানো প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানান, এমন হলে এনসিটিবি সেসব বই সরবরাহের অনুমতি দেয় না। এমনকি পুনরায় টেন্ডার অনুযায়ী শর্ত মেনে বই ছাপানোর জন্য আদেশ দেয়।
অভিযোগ উঠছে কতিপয় ছাপাখানা নিম্নমানের নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপাচ্ছেন। বই ছাপানোর কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য সিন্ডিকেট করে ছাপাখানা মালিকরা প্রাক্বলিত দরপত্রের চেয়ে অনেক কম দামে টেন্ডার জমা দেয়। এখন তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার অজুহাতে নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপিয়ে সরবরাহ করছে। এদিকে ছাপাখানায় সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে এনসিটিবি। ছাপাখানা কর্তৃপক্ষের প্রতি ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- কোনো ছাপাখানায় সংবাদকর্মীরা যেন যখন-তখন প্রবেশ করতে না পারেন। প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে তারা যেন কাগজের ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে না পারেন। এদিকে নিম্নমানের নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই ছাপানোর দায়ে বেশকিছু বই ফেরত পাঠিয়ে তা পুনরায় ছাপাতেও বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি সূত্র।
নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান আমাদের সময়কে বলেন, এবার ইতিহাসের সবচেয়ে সর্বনিম্ন মানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হচ্ছে। বইয়ের মান নিয়ে বোর্ডের কোনো আগ্রহ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, গত বছরও অনেক প্রেস মানহীন কাগজে বই ছেপেছিল। তখন কয়েকটি ছোট প্রেসকে লোকদেখানো শাস্তি দেওয়া হয়। রাঘববোয়ালরা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার ফলে এবারও নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষামন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে এ নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এনসিটিবির সহযোগিতায় সক্ষমতার অধিক কার্যাদেশপ্রাপ্ত দুটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বোর্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে নিম্নমানের কাগজে পাঠের অযোগ্য পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে। এসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের (জানুয়ারি মাস) ৪-৫ মাস পরে পাঠ্যবই সরবরাহ করলেও তা এনসিটিবি নথিভুক্ত করে নাই। এনসিটিবির চেয়ারম্যানের নির্দেশে সফটওয়্যার জালিয়াতি করে এই অনিয়ম করা হয়। এবারও সেই প্রতিষ্ঠান দুটিকে সর্বোচ্চ কাজ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মুদ্রণ শিল্প সমিতি।