সকাল ৮টায় ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সকাল ৮টার একটু আগেই প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। সিটি কলেজ কেন্দ্রটি ঢাকা-১০ আসনের মধ্যে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব ছিলেন। এ সময় হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী ছবি তোলেন ও কেন্দ্রে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। সময় শুরুর পরই প্রধানমন্ত্রী ভোটকক্ষে প্রবেশ করেন। তারপর তিনি ভোট দেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রধানমন্ত্রীর ভোট দেওয়া ও বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করে।
সকাল ৮টায় রাজধানীর কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছে আমাদের প্রতিবেদকরা।
ঢাকা-১৮ আসনের ৩ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোট শুরুর প্রথম ২০ মিনিটে দুটি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো এজেন্ট আসেনি।
জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের একমাত্র আসন ঢাকা-১৮ তে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের। এই আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৫৪টি।
সকালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ভোটকেন্দ্রে (১১ নম্বর কেন্দ্র) দেখা যায় এখানে ২০ মিনিটে ভোট দিয়েছেন একজন।
ভোটকেন্দ্র ১১ (পুরুষ-১) এর প্রিসাইডিং অফিসার অফিসার শহিদুর রহমান জানান, এখানে পাঁচটি ভোটিং বুথে ভোটার রয়েছে ২৫৮৬ জন। একজন ভোট দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত লাঙ্গল ও কেতলী প্রতীকের এজেন্টরা এসেছেন।
এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৫৮৬ এবং ভোটকেন্দ্র ১২ (পুরুষ-২) এ ভোটার সংখ্যা ৩২০০।
ভোটকেন্দ্র ১২ (পুরুষ-২) এর প্রিসাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, লাঙ্গল, ট্রাক ও ঈগল প্রতীকে এজেন্ট এসেছে।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভোটকেন্দ্র-১৩ তে (নারী) মোট ভোটার ২২২৯ জন।
প্রিসাইডিং আফিসার মো. হাবিবুর রহমান জানান, এখানে ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত লাঙ্গলের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। কেটলি বা ট্রাক প্রতীকের এজেন্টও আসেনি।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। এ ছাড়া সারা দেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এ ছাড়া দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন। এদের মধ্যে থাকছেন বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীও।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি প্রথমে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সমঝোতার ভিত্তিতে পরে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া, তাদের ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জেপিকে (মঞ্জু) ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
ভোটের মাঠে না থাকলেও, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
এ অবস্থায় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বাইরে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় আওয়ামী লীগ। যেসব আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৯ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয় ভোটের আগের দিন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আছেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি থেকে দেশের ৬২ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা ও বরগুনা এবং ১৯ উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভোটারদের আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তবে, নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর।
১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সময়য় ছিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৮ ডিসেম্বর।
১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় এবং শেষ হয় গত শুক্রবার সকাল ৮টায়।