‘দেশে একতরফা নির্বাচন শুধু সংকট ও বিপর্যয় ডেকে আনবে’

97

বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় দেশে আবারও একটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারিত হচ্ছে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে। এর ফলে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, সে জায়গাটা দখল করে নিতে পারে উগ্র ধর্মান্ধরা। এটা দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ ছাড়া একতরফা ভোটের কারণে উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শীতল হবে এবং দেখা দেবে সংকট।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ: নির্বাচন, অর্থনীতি এবং বহিঃসম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক আমলা, কূটনীতিবিদ, সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এ চৌধুরী, সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আবারও একটা একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। সুতরাং আগামী ভোটের ফলাফল কী হবে, ইতিমধ্যে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে তা মোটামুটি নির্ধারিত হয়ে আছে।’

দেশে রাজনৈতিক শূন্যতায় উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মাঠে মূল খেলোয়াড়দের একটি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, অন্যটি বিএনপি; যারা নির্বাচনের বাইরে আছে। তাদের নিঃশেষ করার জন্য সব ধরনের রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই জায়গাটা উগ্র ধর্মান্ধরা দখল করে নিতে পারে। এটা আমাদের দেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিরোধী দল খোঁজার’ প্রক্রিয়া মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘২৬ থেকে ৩২টি আসন ইতিমধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গেছে। আরও ৩০ আসন অন্যদের দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪০ আসন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নিশ্চিত করেছে। ফলে বলা যায়, নির্বাচন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা শেষ করে দেবে। এর ফলে মাল্টি পার্টি বলে যা আমরা বুঝি, তা আর থাকবে না। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ভাষায় বলতে হয়, “যারা অংশগ্রহণ করছে, তারা আসন ভিক্ষার রাজনীতি করছে”।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে আমি নির্বাচন বলতে চাই না। আমি বলি, এটা বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা।’

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাষ্য আসছে, তাতে পশ্চিমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করার কোনো লক্ষণ বা প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের বাদ দিয়ে কি আমরা চলতে পারব? যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে তো আমাদের ক্রয়ক্ষমতা থাকবে না। কোনোভাবেই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না।’

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা হচ্ছে, এটাকে নির্বাচন বলে আলাপ করার কিছু নেই। নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের কারও না কারও হারার সম্ভাবনা থাকে। এখানে কারও হারার সম্ভাবনা বা সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যে নির্বাচন হচ্ছে, সেটা একদলীয় নির্বাচন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ সুষ্ঠু নির্বাচন। গত ৫২ বছরে এ পদক্ষেপই নেওয়া যায়নি। অসাধু ব্যবসায়ী, অসাধু রাজনীতিবিদ ও আমলারা মিলে একটি চক্র তৈরি করেছেন। এই চক্র ভাঙা ছাড়া পথ নেই।’

আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

পূর্বের খবরসীমা আনন্দ, কে এই ৬২ বছর বয়সী ইউটিউবার যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করে জনপ্রিয়
পরবর্তি খবরসরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের ডাক