দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়: এইচআরডব্লিউ

119
অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত, নিরপেক্ষভাবে সহিংসতার সব ঘটনা তদন্ত করা। এসবের মধ্যে এমন সব ঘটনাও আছে, যে ক্ষেত্রে একপক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করেছে।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি আরও বলেছে, গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি পূর্বপরিকল্পিত সমাবেশের পর থেকে প্রায় ১০ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান সহিংসতায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে আর আহত হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক অংশীদারদের কাছে দাবি করছে, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আবার একই সঙ্গে দেশটির রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের দিয়ে কারাগার ভরছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অংশীদারদের এই বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত যে, সরকারের কর্তৃত্ববাদী দমন-পীড়ন ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বিপন্ন করবে।

১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, ভিডিও ও পুলিশি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে যে, সম্প্রতি নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, খেয়ালখুশি মতো গণগ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী নিরাপত্তা বাহিনী।

এইচআরডব্লিউর সিনিয়র এশিয়া গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার জানান, চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। ব্লেকনার বলেন, ‘সরকার যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণগ্রেপ্তার, গুম, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষ, সমালোচক ও অধিকারকর্মীদের অকার্যকর করে দেয়, তখন মুক্ত নির্বাচন আয়োজন অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর বিএনপি ৩১ অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ সময়ে এবং পরে পুলিশ, বিরোধী দলের সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সব পক্ষই সহিংসতা করেছে। বিক্ষোভের জবাবে অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে তাদের প্রধান কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। একে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিরোধী দলীয় প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে হামলাকে উৎসাহিত করে প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে চলমান সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছেন। ৩রা নভেম্বর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি তারা কাউকে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেন, তাহলে সেই আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ  করতে হবে। যে হাত দিয়ে কোনো কিছু পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে  দিতে হবে। বলেন, তাতে যদি তাদের শিক্ষা হয়।

ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সমন্বিতভাবে  বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। বিএনপির একজন সমর্থক বলেন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাস্তায় থাকায় লোকজন বাইরে আসতে ভয় পাচ্ছে।

৪ নভেম্বর ঢাকায় রেকর্ড করা একজন সাংবাদিকের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দাঙ্গা পুলিশের পিছনেই কাঠের লাঠি হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা স্লোগান দিচ্ছেন, বিএনপির একটা করে কর্মী ধর, ধরে ধরে জবাই কর।

একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে দেশের অন্য অংশগুলো থেকেও। ফেনী থেকে ৪ নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে দেখা গেছে, দাঙ্গা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাঠের লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বিবৃতিতে  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিদেশি সরকারগুলোর বলা উচিত যে, মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আছে সরকারের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ বাণিজ্য কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আবেদন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এটা করা হলে গার্মেন্টসসহ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যে শুল্ক হ্রাস পাবে। তবে সরকারের অপব্যবহারের কারণে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

সূত্র: এইচআরডব্লিউডটওআরজি

পূর্বের খবরঢাকায় ফিরলেন পিটার হাস
পরবর্তি খবরজাতীয় পার্টি ২৮৯ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা, মনক্ষুণ্ন রওশন এরশাদ