ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

141
নিউজ ডেস্কঃ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বড় একটি অংশই নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথের ওপর দিয়ে মারত্নক নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে। ঢাকা বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ চলছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। এর ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ এরই মধ্যে চালু হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের নির্মাণ শেষ হতে সময় লেগে যেতে পারে আগামী বছর পর্যন্ত। উড়ালপথটির সিংহভাগই নির্মাণ হচ্ছে রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের বিমানবন্দর-কমলাপুর অংশের রেলপথের ওপর। পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, দেশের ব্যস্ততম রেল সেকশনের ওপর নির্মীয়মাণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো অবকাঠামোর কাজ চলছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই। এতে রেলপথ ও এর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে বিমানবন্দর-কমলাপুর অংশের রেলপথে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এরই মধ্যে একটি দুর্ঘটনাও ঘটে গেছে।

ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের। তেজগাঁও এলাকায় একটি ক্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়ে আখাউড়া-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রেন তিতাস কমিউটার। ট্রেনটি ঢাকা স্টেশনের (কমলাপুর) দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে সংঘর্ষে পড়া ক্রেনটি ব্যবহার হচ্ছিল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে।

ওই দুর্ঘটনার জন্য এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতিকে দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুর্বলতা রেলপথটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যদিও রেলের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাটিকে ‘‌বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবেই দেখছেন।

প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের বেশির ভাগ অংশই পড়েছে বিদ্যমান ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে। এ অংশকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম রেলপথ। নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেন ও খুলনা-যশোরের সুন্দরবন-বেনাপোল এক্সপ্রেস বাদে দেশের ঢাকাকেন্দ্রিক সব ট্রেনই এ রেলপথ ব্যবহার করে।

বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত দুই পাশে মোট ৩২ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথসংলগ্ন এলাকা ব্যবহার করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে। এসব জায়গা সংযোগ রাস্তা হিসেবে মালপত্র এবং নির্মাণ উপকরণ বা নির্মাণ যন্ত্র পরিবহন ও নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য ব্যবহার করছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ।

রেললাইনের দুই পাশে দুটি পিলার তুলে সেগুলোর ওপর আড়াআড়িভাবে গার্ডার বসিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামো। সরজমিন তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রেলপথের দুই পাশের জায়গা ব্যবহার করে কাজ করছেন শ্রমিক-প্রকৌশলীরা। কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওপরে নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকরা, আর নিচ দিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। আবার লাইনে যখন কোনো ট্রেন থাকছে না, তখন রেলপথের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ ও ভারী নির্মাণ যন্ত্র। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেলপথটিতে কিছুক্ষণ পরপর ট্রেন যাতায়াত করে। এজন্য নির্মাণ উপকরণ ও ভারী যন্ত্র স্থানান্তরের জন্য খুব বেশি সময় তারা পান না। এতে কিছুটা নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।

এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ সম্প্রসারণ (বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ) প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌রেললাইনের ওপর দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা কিন্তু এর আগে কখনো ঘটেনি। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমার ধারণা, ক্রেনচালকের ভুলের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। ক্রেনটি রেললাইনের খুব কাছে রাখার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘‌কনস্ট্রাকশনের সময় যেকোনো হিউম্যান এরর হতেই পারে। আজকেও আমি সাইটে যাওয়ার সময় দেখছিলাম, ক্রেন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সে ক্রেন কিন্তু নিরাপদ দূরত্বেই ছিল। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ক্রেনচালক হয়তো ক্রেনটি লাইন থেকে কতটা নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে তা না বুঝেই লাইনের কাছে চলে গিয়েছিলেন।’

যদিও দুর্ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে নিরাপত্তা ত্রুটির কারণেই হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের কাজটি যেখানে হয়েছে, সেই দিকটা অপেক্ষাকৃত খোলামেলা জায়গা। ওইখানে যেভাবে কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিস হয়েছে, যেভাবে নিরাপত্তার বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করা হয়েছে, পরের অংশেও তাদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া দরকার ছিল। আমি মনে করি, নিরাপত্তার বিষয়টিতে এখানে অনেকটাই ছাড় দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এক্সপ্রেসওয়ে একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প। এ ধরনের প্রকল্পের সৌন্দর্যই হলো যারা বিনিয়োগকারী, তারা সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করবে। কিন্তু এখানে অনেকটা ‍ফ্রি স্টাইলে কাজ করা হচ্ছে। ‌প্রকল্পটি কমলাপুর পর্যন্ত রাজধানীর যত ভেতরের দিকে ঢুকেছে, তত ভেতরের দিকে আমরা যতটা ঢুকব, পরিস্থিতি তত ভিন্ন পাব। জনঘনত্ব বেশি পাব। করিডোরটি সংকীর্ণ অবস্থায় পাব। এমন প্রেক্ষাপটে এখানে আরো অনেক সচেতনতা ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রকল্পটির পরিচালক ও সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পূর্বের খবরজনপ্রশাসন মন্ত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
পরবর্তি খবরক্রিকেট ভালো করতে গেলে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে পাপন