বিএনপির এই অবরোধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। পাশাপাশি কর্মসূচি নিয়ে বিনা আলোচনার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা। তাদের দাবি, ঘোষিত আগামী মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে কোনও আলাপ করা হয়নি।
গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও একাধিক দলের নেতারা জানান, বিএনপি কোনও আলোচনা ছাড়াই অবরোধ ডেকেছে। যেহেতু ঢাকায় অনেক দিন পর একটি প্রকাশ্য কর্মসূচি পালিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে সমাবেশ, গণমিছিলের মতো প্রোগ্রাম দেওয়া যেতো। যেটুকু স্পেস সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে আবারও সামনে আসা যেতো।
১২ দলীয় জোটের এক নেতা জানান, রবিবার যুগপতে যুক্ত সবাই প্রকাশ্য কর্মসূচি পালন করেছে।
একটি জোটের অন্যতম এক নেতা বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে—দুজন নেতা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, অথচ তারা দেশেই নেই।’
রবিবার বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যুগপৎ ধারায় যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য স্থায়ী কমিটির একজন দায়িত্বশীল আছেন।’
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানববন্ধনে বিএনপি হামলার শিকার হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা গাইবান্ধায় হামলায় শিকার হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের সারা দেশের বহু জায়গায় গ্রেফতার, হামলা চালিয়েছে সরকার। কিন্তু ঢাকায় প্রোগ্রাম করা গেছে চাপ ও হুমকি মোকাবিলা করে। এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল কোথাও কোথাও সমাবেশ-বিক্ষোভ থাকবে। পরশু থেকে ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ। আজকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসেও রেহাই দেয়নি। ফলে সরকার দমননীতি ও কৌশল অব্যাহত রেখেছে, এ কারণে অবরোধের ডাক দিয়েছি।’
সাইফুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি, বিরোধী দলগুলো স্ব-স্ব জায়গা থেকে যেভাবে সমাবেশ করেছে, যুগপতের এই ধারা অব্যাহত ও জোরদার রাখতে চাই। মানুষকে সম্পৃক্ত রাখতে চাই। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যাচ্ছি। এ অবস্থায়ও চেষ্টা করছি। আজকে দেখুন, বরিশালে দাঁড়াতেই দেয়নি। নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপরও চেষ্টা করছি। প্রকাশ্যে আসছি। সামনে ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের নেতারা যাবেন শ্রদ্ধা জানাতে (জাতীয় স্মৃতিসৌধে)। প্রকাশ্য রাজনীতি হবে।’
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ১০ দফা অবরোধ ও দুইবার হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অন্য নেতারা মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটিসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। এরপর সেদিনই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন তারা।
জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়ার উদ্যোগ স্তিমিত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে একমঞ্চ বা একটি ব্যানারে কর্মসূচি দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলমান ছিল, তা আপাতত সেভাবে এগোচ্ছে না। দলের স্থায়ী কমিটির একটি অংশ জোর তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও শীর্ষ নেতৃত্ব নানা হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সূত্রের দাবি, ‘অন্তত এই মাসটা দেখতে হবে, পুরো বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।’
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নানা আলোচনায় এ বিষয়টিও ছিল বলে জানান একজন সদস্য।
যুগপতে যুক্ত একাধিক দলের নেতারা জানান, জামায়াতের সঙ্গে মঞ্চ গড়ে তুলতে সাবেক ২০ দলীয় জোটের কিছু শরিক, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), গণফোরামসহ কিছু দল চাইলেও গণতন্ত্র মঞ্চ, ইসলামী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এবি পার্টিসহ যুগপতে যুক্ত কয়েকটি দল অনীহা জানিয়েছে।
একজন জোটনেতা বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি স্লো-ডাউন হয়েছে। যুগপতে যুক্ত বেশিরভাগ শরিক দল একমত হয়নি। তবে বিএনপি চাইলে করতে পারে, সে ক্ষেত্রে যুপগতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপির একটি অংশ ও জামায়াত প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে ‘ডেসপারেট’ বলে দাবি করেন এই নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শোনেন, যখন যেটা হবে দেখতে পাবেন। অগ্রগতি বা গতি সম্পর্কে বলা যাবে না। সবাই রাজপথে আছি, রাজপথে থাকতে হবে, এটাই বড় কথা।’