জাতীয় পার্টি কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে?

130

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল (৬ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আসন সমঝোতার চেয়েও বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণতন্ত্রের ভবিষ্যত এবং জাতীয় পার্টির থাকা না থাকা।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে রাখাই এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন যে, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোন রকম সম্ভাবনা নেই। তারা নির্বাচনে আছেন, নির্বাচনে থাকতে চান। তবে নির্বাচনের পরিবেশ আরও সুষ্ঠু হওয়ার দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ কয়েকটি আসনে সমঝোতা করতে চায়। তবে সেই সমঝোতাটা আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি প্রকাশ করার পক্ষপাতী নয়। বরং সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় পার্টি ৪০টি আসনে সমঝোতার প্রস্তাব করেছে। যে আসনগুলোতে নৌকার কোনো প্রার্থী থাকবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২০টি আসনে ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে।

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, এই বৈঠকে জাতীয় পার্টির একটি বড় ইস্যু ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা দাবি করেছে যে, বিভিন্ন আসনে যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে তারা নির্বাচনে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যদি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই জায়গায় যদি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে তাহলে জাতীয় পার্টির পক্ষে তাঁরা কাজ করবেনা। অবশ্য জাতীয় পার্টির কোনো নেতা তাঁদের পক্ষে আওয়ামী লীগের কাজ করা না করা নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁরা বলছেন যে, যদি একটি সমঝোতার ভিত্তিতে নৌকা প্রার্থীদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিই অবশ্যই ভালো করবে ৷ বিশেষ করে যে সমস্ত আসনে জাতীয় পার্টির এমপিরা এখনো আছেন, সেই সমস্ত আসনগুলোতে হয়তো আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবেন।

তবে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়ার চেয়েও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকা না থাকা। বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ফলে এখন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির থাকাটা একটা বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে চলে যায় তাহলে এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নির্বাচন হিসাবে পরিগণিত হবে।

সেক্ষেত্রে এই নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা সংকট তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, জাতীয় পার্টি গতকালকের বৈঠকেও আশ্বস্ত করেছে যে তারা নির্বাচনে থাকতে চায় এবং এই নির্বাচনে তারা শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব গণমাধ্যমে বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন সাবালক হয়েছে। নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করবে বলেই তাঁরা আশাবাদী ৷ তবে সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত কী করবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে। কারণ জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি অংশের ভূমিকা রহস্যময়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচনের ব্যাপারে, সেটি একটি বড় ইস্যু হিসেবে সামনে আসতে পারে৷

কারণ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছিল। এবার যদি জাতীয় পার্টির সেরকম কিছু করে, তাহলে নির্বাচন আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই কারণেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে থাকে সেজন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিতেও প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

পূর্বের খবরবাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র :জন কিরবি
পরবর্তি খবরনাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার যুবদল নেতা আজাদ ২০ দিন পর লাশ হয়ে ফিরলেন