ঢাকাঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার পুরো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তার পরিবার ও চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিকভাবে এই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে গত আগস্টের শুরুতে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দলের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল বাংলা ভিউজকে এ তথ্য জানান।
চিকিৎসকদের সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিদেশে নেওয়া হচ্ছে। লন্ডনেই তার পরবর্তী চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু স্ট্যাবল আছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সর্বশেষ গত ৭ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ারে ভর্তি হন। এরপর ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসভবনে ফিরে আসেন। এর আগে ১৫৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি বাসায় ফেরেন তিনি।
২০১৮ সালে দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ৭৮ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার সিরোসিস-সহ নানা রোগে ভুগছেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দফায় দফায় খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য চিঠি ও আহ্বান জানালেও তা মানেনি সাবেক সরকার। পরিবার থেকে সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হলেও অনুমতি মেলেনি।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করেন।
বিএনপির দায়িত্বশীলরা উল্লেখ করেন, বিমানে সফর করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার কোনও শারীরিক সমস্যা হয় কিনা, সেটিকে প্রধান বিবেচনায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। দলের নেতারা বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা উন্নত বিমানে চিকিৎসা সরঞ্জাম-সংবলিত কেবিনে খালেদা জিয়ার ভ্রমণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্লাইট সংক্রান্ত তৎপরতা শেষ হয়ে এলেই ভ্রমণের প্রস্তুতি নেবেন বেগম জিয়া।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাত পৌনে ৮টার দিকে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে বেগম জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান রয়েছেন ঢাকার বাসায়। তিনি গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন—এই দোয়া ও প্রত্যাশা আমাদের সবার মধ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে। এখন এটাই সবসময় দলের নেতাকর্মী, অনুসারী, ভক্তসহ দেশবাসী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।’