গাজীপুরের শ্রীপুর রিসোর্টে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বানানো হয়েছে রাস্তাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, চারপাশে বন বিভাগের জমি থাকলেও রিসোর্টের জায়গা তাদের। সীমানা নির্ধারণের আবেদন করে কাজ চালানো হয়েছে।
শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের আওতাধীন ঘন শাল-গজারি বনের বিস্তৃত এলাকার মাঝখানে গড়ে তোলা হয়েছে রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্ট। কাঁটাতারসহ অস্থায়ী সীমানাপ্রাচীর দিয়ে জায়গাটি ঘিরে ভেতরে ইতিমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় কটেজ, সুইমিংপুল ও শিশুপার্ক। রিসোর্টে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বানানো হয়েছে রাস্তা। রিসোর্ট নির্মাণের মালপত্র ভারী যানবাহনে করে নেওয়ার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংরক্ষিত বনের অনেক গাছ।
শাল-গজারির ঘন বন, তার মধ্যে উঠছে রিসোর্টের জন্য কংক্রিটের ভবন। গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের আওতাধীন এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে রেইনফরেস্ট ইকো রিসোর্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে সাতখামাইর বিট কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিপু সুলতান নামের এক ব্যক্তি ২০২১ সালে রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্ট বানাতে ৪ দশমিক ৭৪ একর জমির সীমানা নির্ধারণ করার আবেদন করেন। আবেদনটি করার পরপরই সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে রিসোর্ট বানানোর কাজ শুরু করেন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় না থেকে। চারপাশে আমাদের সংরক্ষিত বনভূমি থাকার কারণে এই সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেয় না। এ ছাড়া সীমানা নির্ধারণ ছাড়া বনভূমি ঘেঁষে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাপজোখ করে অবৈধ সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। পাশাপাশি নির্মাণকাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা করব।’
ওই কর্মকর্তা জানান, রিসোর্টের কাজ ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে করা হলেও চারপাশে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যে রাস্তা ব্যবহার করছে, তা দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো. আশিক বলেন, ‘রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্টের মালিক টিপু সুলতান। আমি রিসোর্টের সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করে থাকি। রিসোর্টের জায়গা আমাদের মালিকানাধীন। সীমানা নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বনভূমির রাস্তা ব্যবহার করবে না। আমরা আমাদের জমিতে কটেজ নির্মাণ করছি। আমরা বন বিভাগের ১ শতাংশ জমিও ব্যবহার করছি না।’
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতরে রিসোর্ট নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে। বনভূমির মাঝখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সীমানা নির্ধারণের আবেদন করেই সেখানে রিসোর্টের কাজ শুরু করাটা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। চারপাশে যেহেতু বনভূমি, সে জন্য বন বিভাগ সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেবে না। সংরক্ষিত বনভূমির ভেতর দিয়ে কোনো ধরনের রাস্তা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ সীমানাপ্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।