নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুর–২ আসনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিনের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার দুপুরে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মতবিনিময় সভা করে ভোট চেয়েছেন গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন ওরফে বুদ্দিন। আজ সোমবার দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ হতে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৪৩ হতে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ আসন। এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান (রাসেল) এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কাজি আলিম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আসনটিতে আরও প্রার্থী হয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, জাকের পার্টির প্রার্থী রিনা রহমান, ন্যাশনাল পার্টির কাজী হাসিবুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এস এম জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আমির হোসাইন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেহেনা আক্তার।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বলেন, ‘সব সময় বাইরে ভোট দিয়েছেন, এবার ঘরের মধ্যে ভোট দেন। আমি যদি নির্বাচিত হই, বিজয়ী হই, সে বিজয় হবে জাহাঙ্গীরের। আমি বিজয়ী হলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি সুন্দর গাজীপুর গড়ে তুলব।’
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বলেন, ‘এমপি নির্বাচিত হয়ে যদি দিনরাত সিটি করপোরেশনের পেছনে লেগে থাকেন, তাহলে উন্নয়ন হবে কীভাবে। টঙ্গীতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাকে তারা বলেছে, টঙ্গীর মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। তারা (প্রতিমন্ত্রী) কাউকে কিছু দিতে পারে না, শুধু সংরক্ষণ করতে পারে।’
সভায় জাহাঙ্গীরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন আলিম উদ্দিন। তাঁকে ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীর আলমের মতো নেতা খুব বিরল। তিনি আমার থেকে অনেক ছোট, কিন্তু একজন ক্যারিশমাটিক নেতা। তিনি মাত্র তিন বছরে গাজীপুরে চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, জাহাঙ্গীরে বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করেছিল। তিনিসহ (জাহাঙ্গীর) সবাই আমার পক্ষে রয়েছেন, আমি আপনাদের ঘরের সন্তান। সব সময় আমাকে আপনারা পাশে পেয়েছেন, ভবিষ্যতেও পাবেন। তাই আমি নির্বাচিত হয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি আধুনিক শহর গড়ে তুলব।’
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে আনা হলে কাজী আলিম উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান) যেখানে প্রটোকল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ কিছু হচ্ছে না। আর আমি একটি আবদ্ধ জায়গায় একটি উঠান বৈঠক করেছি। এটা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না।’
সভায় বক্তব্যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর আলমও। যাঁরা মানুষকে মূল্যায়ন করে এবারের নির্বাচনে তাঁদের পক্ষেই কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তন আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ভাই (স্বতন্ত্র প্রার্থী) এর মাধ্যমে যেন হয়। যেহেতু বুদ্দিন ভাই প্রবীণ নেতা, তাঁর মাধ্যমে যেন সমাজ ভালো থাকে, এ জন্য তাঁর মাধ্যমে পরিবর্তন চাই৷ গাজীপুরের-১ থেকে পাঁচটি আসনেই যাঁরা মানুষকে, আমাদেরকে মূল্যায়ন করেন, তাঁদের পক্ষে কাজ করব। বুদ্দিন ভাই যেহেতু আমাদের সঙ্গে থেকে উন্নয়ন করতে চেয়ে দোয়া চেয়েছেন, তাঁর জন্য কাজ করব। রাজনীতিতে দেখেছি বুদ্দিন ভাই একজন আদর্শবান মানুষ। তাই আমরা বুদ্দিন ভাইয়ের জন্য ভোট চাই, দোয়া চাই।’
আচরণবিধি ভেঙে আলিম উদ্দিনের মতবিনিময় সভার বিষয়ে গাজীপুর সহকরী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এইচ এন কামরুল হাসান জানান, এই সভার বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।