কোটা আন্দোলনে উত্তাল বিভিন্ন ক্যাম্পাস, রোববার সারা দেশে সড়ক অবরোধ

95

কোটা বাতিলের দাবিতে রোববার সারা দেশে সড়ক অবরোধ। বিকেলে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে ‘বাংলা অবরোধ’ নাম দিয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আজ কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আগামীকাল সারা দেশে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেলে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেন। রাজধানীর ব্যস্ততম এই মোড়টি প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

নিউজ২১ডেস্কঃ সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এতে করে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ওই ধারাবাহিকতায় রবিবারও সারাদেশে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ-অবরোধ করবেন।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ অবস্থান থেকে রবিবার সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

ঘোষিত এ কর্মসূচির আওতায় রবিবার বিকাল ৩টা থেকে সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেবেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এ কর্মসূচি মেনে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ।

 

 

 

এর আগে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করে। পরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এর ফলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ পয়েন্ট হয়ে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

এদিন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীও একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

শনিবার শনিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে আন্দোলন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেড় ঘণ্টা টাঙ্গাইলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার পর যানচলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সদর উপজেলার আশেকপুর বাইপাস এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নেয় তারা। এতে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কোটা প্রথা বহালের ফলে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে, যা সংবিধান পরিপন্থি। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে পর্যন্ত তাদের জন্য কোটা ঠিক ছিল। নাতি-নাতনি বেমানান। এক শতাংশ প্রতিবন্ধী বাদে সব কোটা বাতিল চাই। কোটা বহাল থাকলে দেশের মেধাবীরা দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যাবে। দেশে সরকারি চাকরি করার আগ্রহও হারাবে। দেশ আরও পিছিয়ে পড়বে।’

ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।

এ সময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায় কোটা প্রথার ঠাঁই নেই,’ ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসঙ্গে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়াও ‘১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান কোটার থেকে অবসান’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কখনোই সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে চাই না, আমরা পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই। কারণ যে পরিমাণ কোটা, তাতে মেধাবীরা দেশে চাকরি না পেয়ে বাইরে চলে যাবেন। দেশে সরকারি চাকরি করার আগ্রহও হারাবেন।’

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।

ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে ওই বছরই সরকারি চাকরিতে পুরো কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। গত ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ৪ জুলাই কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেন আদালত। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহালই থাকল।

হাইকোর্টের ওই রায়ের পর গত ছয় জুন থেকেই তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোরবানির ঈদের কারণে ২৯ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন তারা। এরপর ৩০ জুন থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর ১ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

পূর্বের খবরপবিত্র আশুরা ১৭ জুলাই
পরবর্তি খবরযে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেই দেশ ব্যর্থ হতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী