এরশাদের জাতীয় পার্টির গন্তব্য এবার কোথায়

110

নিউজ২১ডেস্কঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনের যাবতীয় ছক নিয়ে এগোচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে আছে। তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) বরাবরের মতোই নির্বাচন সামনে রেখে ‘এদিক-ওদিক’ অবস্থানে আছে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ তার অনুসারীদের নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতি ‘আস্থা’ রেখে সামনে এগোচ্ছেন। তবে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও তার অনুসারীরা আছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। এমন বাস্তবতায় জাতীয় পার্টির গন্তব্য কোন দিকে এমন প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।

নির্বাচন সন্নিকটে রেখে জাতীয় পার্টির ভেতরে দ্বিধা-বিভক্তি এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে অস্পষ্টতা দলটির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ছাড়া জাপার কাছে বিকল্প পথ নেই। তাই কোন দল সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বা নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হলেই জাপা নির্বাচনী ট্রেনে যাত্রা শুরু করবে। দলটির একজন শীর্ষ নেতার ভাষ্য, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাপা হবে ট্রাম্পকার্ড।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে নানা সমীকরণ তৈরির প্রেক্ষাপটে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জন করেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং জাপা থেকে ৩৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ। উপনেতা হন জিএম কাদের। ওই নির্বাচনে আগে এরশাদের রহস্যজনক অসুস্থতা ও সিএমএইচে ভর্তি থাকা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্ট হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এরশাদ সিএমএইচ থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যান শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।

২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৬ সালে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা নিয়ে বেশ সংকটে পড়ে জাতীয় পার্টি। একপর্যায়ে রওশনকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এরশাদ। পরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উপনেতা বানান ছোট ভাই জিএম কাদেরকে। এর কিছুদিন পরই জিএম কাদেরকে সরিয়ে পুনরায় উপনেতা বানান স্ত্রী রওশন এরশাদকে। এরশাদ মারা যাওয়ার পর জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হন। কিন্তু রওশনের সঙ্গে তার বিরোধ মেটেনি।

দলীয় কার্যক্রম নিয়ে আলাদা আলাদা বক্তব্য, কর্মসূচি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর বিষয়গুলো থেকে দেখা যায়, দলটিতে মতবিরোধ আগের মতোই আছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত মঙ্গলবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। সভা সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির ৫৯ জন তৃণমূলের নেতা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার মত দিয়ে বিএনপির সঙ্গে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ সময় জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল চুন্নু উপস্থিত নেতাদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে তারা জানিয়ে দেন, সব ভেবেই নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যান জাপার চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। এ সময় তার সঙ্গে জাপার চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯টার পর বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে আমাদের সময়কে জানান, রাষ্ট্রপতির চায়ের আমন্ত্রণে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে জিএম কাদের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন বলে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে, গত ১ নভেম্বর জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ১৭ জন সংসদ সদস্য অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। জাতীয় পার্টির এমপি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নানের উদ্যোগে দলটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। তবে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাক্ষাৎ করতে যাননি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, রুস্তম আলী ফরাজী, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রতিনিয়ত জাপার ব্যানারে সহিংসতাবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে একাধিক সমাবেশে বাবলা বলেছেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড হবে।

দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান আমাদের সময়কে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নিয়ে আলোচনা নানা দিকে হচ্ছে। নানা রকম কথা হচ্ছে। তবে বাস্তবে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার দিকেই যাবে; হোক আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোনো দল। কারণ ক্ষমতায় না থাকলে জাপা অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে।’

কোন পথে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ আমাদের সময়কে বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ আছে। তফসিল ঘোষণার পর তিনি বাদবাকি সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের দ্বিধা-বিভক্তির বিষয়ে তিনি জানান, দলের বিভক্তি সময়মতো ঠিক হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন ফেয়ার হবে কিনা তার পরিবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই সিদ্ধান্তহীনতায় আমরা আছি। আমরা আরও দু-চারদিন দেখব। একটা বিশ^াসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে মানুষ যেতে পারবে, ভোট দিতে পারবে- এমন অবস্থা যদি হয় তা হলে আমরা নির্বাচনে যাব।’

দল থেকে বহিষ্কৃৃত জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা আমাদের সময়কে জানান, তিনি দল থেকে মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে যাবেন। তিনি বলেন, গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারার চেয়ে নির্বাচনে যাওয়া ভালো।

পূর্বের খবরকোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপের উপায় বের করার আহ্বান পিটার হাসের
পরবর্তি খবরউত্তরায় শনিবার কবি জাকারিয়া চৌধুরী-আমিনুল ইসলাম বেদু জন্মোৎসব