এখন প্রশ্ন একটাই ভোটের মাঠে বিরোধী দল কে?

129

নিউজ২১ডেস্কঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধী দল নেই। নির্বাচনে
অংশগ্রহণকারী ২৭টি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব দলেই সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। এসব দল ভোটে নামার আগেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার আশীর্বাদ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সাক্ষাতের দলে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। ওই দুই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা গিয়েছে। কিছু আসনে হাইকমান্ডের ইশারায় কিংস পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া দলের সভাপতির সবুজ সংকেত পেয়ে অন্তত ১২৭টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের সকলেই স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। এরা ডামি প্রার্থী হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটের মাঠে মূল প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান ২৮ জন সংসদ এবং দলীয় জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র (পদত্যাগী) রয়েছেন ৩৫ জন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল কে তা নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে। খোদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সফরত ইইউ প্রতিনিধিদল নির্বাচনে বিরোধী দল কে হবে তা জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ প্রশ্নের কথা জানালে বিরোধী দল কে তা জানাতে পারেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ইইউ প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জিজ্ঞাসা করেছিল নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কে[?] কী জবাব দিয়েছেন তা তিনিও প্রকাশ করেননি। দেশে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলে ৭৩টি রাজনৈতিক দল আছে। এরমধ্যে নিবন্ধিত ২৭টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এই ২৭টি দলের মধ্যে ৪টি দলের (গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, মুসলিম লীগ, কল্যাণ পার্টির) একটি অংশ নির্বাচনে গিয়েছে। অন্য অংশ বর্জন করেছে। এ হিসাবে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৩টি সম্পূর্ণ ৪টি আংশিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই দলগুলোর প্রায় সবকটি দলই সরকারি দলের অনুগত। বিভিন্ন সময়ের নির্বাচনে এরা সরকারি দলের সঙ্গে জোটভুক্ত ছিল। এর বাইরে তিনটি বিতর্কিত দল যারা কিংস পার্টি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এই তিনটি কিংস পার্টি- তৃণমূল বিএনপি, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি বা বিএসপি।

দু’টি দল এ সরকারের নির্দেশনায় এবার নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দলগুলো বিভিন্ন সংস্থার তৈরি বলে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা আছে। বাকি ২৪টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ বাদ দিলে বাকি ২২টি দলের মধ্যে ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দল রয়েছে ৬টি । দলগুলো হচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এই দলগুলো সরকারি দলের আদর্শিক জোট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে । ১৪ দলীয় জোটের ৩টি দলের জন্য ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করে তাদেরকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১৬টি দলের মধ্যে ৫টি দল- জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, জাকের পার্টি, বিকল্প ধারা ও মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকভুক্ত ছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। এই দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম ছাড়া অন্য দলগুলো ২০০৮ ও ২০১৪ সালেও মহাজোটের শরিক ছিল। অবশিষ্ট ১১টি দলের মধ্যে সরকারপন্থি ৪টি ইসলামী দল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এই দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে নানাভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। অবশিষ্ট ৭টি দলের মধ্যে ২টি দল- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী ১২ দলীয় জোটে ছিল। যারাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারাই হবে জাতীয় বেঈমান এই বক্তব্য দেয়ার কয়েকদিন পর কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (মতিন) নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব এএনএম সিরাজুল ইসলামকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তফাজ্জল হোসেন যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই এককভাবে যোগ দেন। প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার আইনগত এখতিয়ার তার না থাকলে নির্বাচন কমিশন তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৫ জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন। রাজনীতিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) নামস্বর্বস্ব পার্টি হিসেবে পরিচিত। একই অবস্থা কল্যাণ পার্টিরও। পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল ইব্রাহিমের ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে জামানত বায়েজাপ্ত হয়েছিল । ২০১৮ সালে নিজ এলাকা চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারো তিনি এ দুটির কোনো একটি আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ দুটি আসনে জাপা এবং আওয়ামী লীগের দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় একটি সংস্থার নির্দেশনায় তিনি কক্সবাজার-১ আসন থেকে প্রার্থী হন । কিন্তু ওই এলাকায় তার কোনো পরিচিতি নেই। এ পরিস্থিতিতে তাকে উদ্ধারে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ।

জেনারেল ইব্রাহিমকে জেতাতে প্রথমে ওই আসনের বর্তমান এমপি জাফর আহমেদকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। দিয়েছে ঋণখেলাপি একজনকে।

পূর্বের খবরআজ থেকে স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে
পরবর্তি খবর‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বিভ্রম তৈরি করছে আওয়ামী লীগ’: শ্রীরাধা দত্ত