দুর্নীতি মামলায় মি. খানের তিন বছর কারাদণ্ড হওয়ার তিনদিন পর দেশটির নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবারের এ ঘোষণার কারণে তিনি আর সংসদ সদস্যও থাকতে পারবেন না।
তিনি অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। তবে পাকিস্তান সরকার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার আগে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বিবিসিকে বলেছেন, “আইন অনুযায়ী আপনি আপনার কর্মের জন্য দায়ী থাকবেন। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। আদালত একজন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করলে তাকে গ্রেফতার তো হতেই হবে”।
৭০ বছর বয়সী মি. খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু গত বছর শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর সংসদে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান।
শনিবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যে রায় দেয়া হয় তার মূলে ছিল বিদেশীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহারের তথ্য সঠিকভাবে না জানানো এবং রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে অর্জিত অর্থ তোষাখানায় জমা না দেওয়ার অভিযোগ।
এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ।
স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী নির্বাচনে মি. খানকে অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত ওই রায় অনুযায়ীই হয়েছে।
পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না।
তবে মি. খানের আইনজীবীরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া রায়কে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং বুধবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদের কাছেই একটি কারাগারে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচনের দাবি তুলে আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন । তিনি সরকার এবং পাকিস্তানের খুবই ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন।
গত বছরের নভেম্বরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেয়ার সময় ইমরান খানের প্রাণনাশের চেষ্টার সময় তার পায়ে গুলি লাগে, সেই ঘটনার জন্যও তিনি উচ্চপদস্থ সরকারি এবং সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রায়শই এধরনের মামলার মুখে পড়তে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে।
গত মার্চে তাকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।সুপ্রিম কোর্ট পরে তার গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।
কিন্তু সেবার তার গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে সহিংস বিক্ষোভে অন্তত দশজন নিহত হয়েছিলো।
পিটিআই-এর ভবিষ্যৎ
ইমরান খান যদি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে একটা বড় প্রশ্ন উঠবে যে তার দল পিটিআই-এর কী হবে?
তবে মি. খান এর আগে বিবিসিকে বলেছিলেন যে তিনি নির্বাচিত হতে পারেন কি না পারেন, তার দল পিটিআই টিকে থাকবে এবং উন্নতি করবে। তবে এটি এখন বাস্তব পরিস্থিতি থেকে অনেক দূরে।
“এর পরের বড় প্রশ্ন হচ্ছে- নির্বাচনকে সামনে রেখে পিটিআই-এর অবশিষ্ট নেতৃত্ব এখন দলটিকে কীভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করবে?” ওয়াশিংটনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল ক্যুগেলম্যান বলছিলেন।
“তারা কি তাদের সমর্থকদের রাজপথে নামানোর চেষ্টা করবেন? সেটা কি সফল হবে? এটা হবে বেশ বড় পরীক্ষা।”সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান “অঘোষিত সামরিক আইনে” চলছে
ইমরান খানকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই গড়ে ওঠেছে। তিনিই এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমনকি, ব্যালট পেপারে এই দলের যে লোগো ছাপা হয় তাতেও ক্রিকেট ব্যাটের ছবি যা ইমরান খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের কথাই তুলে ধরে।
ইমরান খানের দলের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতা, যারা এবছরের শুরুর দিকেও তাকে ঘিরে থাকতেন, তারা দল ছেড়ে চলে গেছেন। দলে আরো যারা নেতা রয়েছেন তারা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য লুকিয়ে রয়েছেন।
এসব থেকেই বোঝা যায় যে ইমরান খানের দল পিটিআইর-এর পক্ষে কার্যকর একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে যাওয়া সহজ হবে না।