আজ শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন শনিবার

75

‘স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার সংযোগ’ স্লোগান নিয়ে শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে এই টার্মিনাল করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, আমরা বলতে পারি তৃতীয় টার্মিনালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে একটি এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম মাইলফলক। নতুন স্থাপনা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন দৃশ্যমান টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

ঢাকাঃ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নতুন টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ সফট লঞ্চিংয়ের জন্য সম্পন্ন হয়েছে এবং শনিবার থেকে এয়ারলাইনগুলো টার্মিনালের নতুন পার্কিং পে ব্যবহার করতে পারবে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ক্যালিবারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী বছরের শেষে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণরূপে চালু হবে। নতুন টার্মিনালটি সমস্ত বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা এবং যাত্রী পরিষেবা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি পাল্টে দেবে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোসহ থার্ড টার্মিনালের ফ্লোর এবং সিলিংয়ে নজরকাড়া প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই পরিশীলিত। যাত্রীরা নতুন টার্মিনালের বিশ্বমানের সুবিধার প্রশংসা করবেন যা আমরা এখানে আগে কখনও পাইনি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর কাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন করতে পারবে না বলে অভিযোগ ছিল অনেকের। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) জাপানি প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করার জন্য নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধনের দিন উদ্বোধনী ফ্লাইট বিমানের, আর সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে বিমান। উদ্বোধনের দিন নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুতির কথা জানালো বিমান কর্তৃপক্ষ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনালের সফল লঞ্চিং হবে আজ শনিবার (৭ অক্টোবর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন। আর এ দিন রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ছেড়ে যাবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালশাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালজানা গেছে, টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে চলছে মহড়া। বোর্ডিং ব্রিজসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে চলছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। উদ্বোধনের দিন বিমানের নেপালগামী একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে যাত্রা করবে। ফলে এই টার্মিনালের প্রথম ব্যবহারকারী হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই এয়ারলাইন। অন্যদিকে তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধনী ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে বিমানের কর্মীরা। এজন্য নতুন ইউনিফর্ম প্রবর্তন করেছে বিমান।

জাপানের আর্থিক সহায়তায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছে। নির্মাণকাজও করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান। আর এ  বিমানবন্দরের পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করতে আগ্রহী জাপান। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং-এর এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালশাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে উদ্বোধনী ফ্লাইট ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমান

সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা এবং  গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করতে দেশি-বিদেশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে জাপানের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বেবিচক। জাপানের পক্ষ থেকে টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা করতে ইতোমধ্যে প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। জাপানের সহযোগিতায় পিপিপির ভিত্তিতে তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনাল ও হ্যান্ডলিংয়ে কাজ পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে কাজ হবে, পরিচালন ব্যয় কীভাবে খরচ হবে, আয়ের অর্থ কীভাবে বেবিচক পাবে এ বিষয়ে সমীক্ষা করছে বেবিচক।

এদিকে দেশের সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ  এয়ারলাইন্স। তবে এ কাজে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকা এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালশাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

সূত্র জানায়, বিমানের আয়ের অন্যতম খাত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানের পরিচালকের (গ্রাহকসেবা)  অধীনে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালিত হয়। আয়ের অন্যতম খাত হলেও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আলাদা কোনও বিভাগ নেই, নেই কোনও পরিচালক, নেই জেনারেল ম্যানেজার।  বিভিন্ন বিভাগের ১৭০০ জন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে কাজ করে। বর্তমানে বিমানে গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসই) থেকে ৪৫০ জন এবং এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস (এপিএস) থেকে ১২৫০ জন কাজ করে। সমন্বয় ও কাজের গতি আনতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংকে বিএফসিসির মতো স্বতন্ত্র বিভাগে রূপান্তর প্রয়োজন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসই) বহরে বর্তমানে ১৬ ধরনের মটরাইজড ইকুইপমেন্ট রয়েছে। যার মোট সংখ্যা ১৯৮টি। নন-মটরাইজড ইকুইপমেন্ট সর্বমোট ১৩৩৫টি। কন্টেইনার ১২৫০টি ও প্যালেট ৭০০টি রয়েছে। তবে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিমান। তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে জনবলও নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিমান।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালশাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

বিমান জানিয়েছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানে দক্ষ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল রয়েছে। সম্প্রতি ৭৭ জন অপারেটর ও ২৭ জন রক্ষণাবেক্ষণ স্টাফ গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এয়ারপোর্ট সার্ভিসেসের জন্য ১০০ জন ট্রাফিক হেলপার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০ জন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিমান বহরে ৩৫০টি নন-মটরাইজড ইকুইপমেন্ট ক্রয় করা হয়েছে।  ২০০টি প্যালেট ক্রয় করা হয়েছে। ১০৭টি মটরাইজড ইকুইপমেন্ট ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরও ৭১টি মটরাইজড ইকুইপমেন্ট ক্রয় পরিকল্পনা রয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালশাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শফিউল আজিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মহড়ায় নতুন ইউনিফর্মে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং টিম বিজি ৩৭১ বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সুসম্পন্ন করেছে। ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কাঠমুন্ডুর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শফিউল আজিম বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা ৫০ বছরের বেশি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সব ধরনের লাইসেন্সও বিমানের রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালের জন্য বিমানের টিম পুরোপুরি প্রস্তুত।

পূর্বের খবরনাট্য ব্যক্তিত্ব ও ঔপন্যাসিক ফেরদৌস হাসান রানার জন্মোৎসব অনুষ্ঠিত
পরবর্তি খবরগাজীপুরে ফুলকির আয়োজনে ‘আমাদের শিশুরা’ নাটকের প্রদর্শনী