আজ থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল বিএনপির, নির্বাচন নয় বার্তা জোর আন্দোলন

125
ঢাকাঃ দেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে দলটি বলেছে, এই মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়; সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারসহ একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সারাদেশে আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সকলে সাহসের ওপর ভর করে বুক চিতিয়ে রাজপথে উপস্থিত হবেন। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে এই হরতাল। জনগণের মালিকানা জনগণকে ফেরত দিতেই এই দুর্বার আন্দোলন।’
Image not found

বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যেসব নেতা রাজপথে সক্রিয় কিংবা সহযোগিতা করবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, এসব নেতাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে তালিকা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রাখবে তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে।

এদিকে, সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিয়ে কোনো দল জোটভুক্ত দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে তা তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানানোর বিধান আছে। গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে গতকাল শনিবার ছিল ইসিকে জানানোর শেষ সময়। গতকাল শেষ দিনে যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দেয়নি, সেসব দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করতে স্থায়ী কমিটির দুই নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এসব দলকে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি ছাড়াও তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নিবন্ধিত ও অনবন্ধিত সমমনা জোট ও দল। দলগুলো হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), গণফোরাম (মন্টু) ও পিপলস পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও নুরুল হক নুরুর গণঅধিকার পরিষদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি।

একইভাবে তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি)। এদের বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামা ইসলামী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও নির্বাচনের ব্যাপারে তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা মনে করেন, তফসিল প্রত্যাখ্যানের পর জোটগতভাবে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে এসব দল ইসির আহ্বানের শেষ দিনেও সাড়া দেয়নি। এটা বিরোধী শিবিরের চলমান আন্দোলনের জন্য ইতিবাচক; বড় ধরনের সফলতাও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু তারা ভাবছেন না। তার বিশ্বাস, এই আন্দোলনে সফলতা পাবেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিএনপির বিশ^াস সরকারবিরোধী দলগুলোর অধিকাংশ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দল ও সমমনা জোটের কিছু নেতাকে নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে বিষয়টি চিন্তায় না রেখে সবাইকে নিয়ে পথ চলতে চায় দলটি।

যুগপৎ আন্দোলনে সরাসরি নেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। তবে দল দুটির সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের বোঝাপড়া রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। ইসলামী আন্দোলন হরতাল-অবরোধে না থাকলেও দৃশ্যত এখনো সরকারবিরোধী অবস্থানে আছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম আমাদের সময়কে বলেন, এই সরকারের অধীনে তারা যে নির্বাচনে যাবেন না, তা পরিষ্কার। এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।

তবে ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণাকে এখনই শেষ কথা ভাবতে চাইছেন না বিএনপির অনেকে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউে মনে করেন, সরকারবিরোধী মনোভাব ধরে রাখলে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বও বাড়বে।

পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী মোর্চাও তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এই মোর্চার সঙ্গে যুক্ত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যমান পদ্ধতিতে আমরা নির্বাচনে যাব না। এই তফসিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।’

গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চ বলেছে, ‘এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশের জনগণ যেই নির্বাচনে অংশ নেবে না, সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের কোনো বিরোধী দল অংশ নেবে না। আর যারা অংশ নেবে তারা ভবিষ্যতে জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবে।’

পূর্বের খবরউত্তরা মিডিয়া ক্লাব আয়োজিত জাকারিয়া-বেদু জন্মোৎসব উদযাপিত
পরবর্তি খবরবিশ্বের ৪১ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চায়